বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। গত বছরে অবস্থান ছিল ১৬তম। ‘র্দুনীতি’ শব্দটি নেতিবাচক শব্দ। এটি ইতিবাচক শব্দ ‘নীতি’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। আভিধানিক অর্থে ‘দুর্নীতি’ হলো নীতিবিরুদ্ধ, কূনীতি ও অসদাচরণ। দুর্নীতি বলতে সাধারণত ঘুষ, বল প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব বা ব্যক্তি বিশেষকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অফিস-আদালতকে ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভের জন্য অপব্যবহার করাকে বুঝায়। সাধারণত দেখা যায় দেশে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দৃশ্যমান কঠোর শাস্তি হয় না। আইনের হাত গলে তারা ঠিকই বেরিয়ে যায়। আবার দেখা যায় অনিয়মের তথ্য প্রকাশের পর অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হয়। রাঘববোয়ালদের ধরা হয় না ফলে দেশে দিনেদিনে দুর্নীতি বেড়েই চলছে। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আর্থিক অবস্থা কিছুটা নগণ্য হলেও ধীরে ধীরে দেশ আর্থিক সচ্ছলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার মান বেড়েছে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা লেখা পড়া করছে। কিন্তু দুর্নীতির ক্রমশ বেড়েই চলছে। দেশ ও জাতির উন্নতি অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায় হলো দুর্নীতি। এমন কোনো সেক্টর নেই, যা দুর্নীতির হিংস্র থাবায় আক্রান্ত হয়নি। দুর্নীতি চারদিকে অসাম্য সৃষ্টি করে সমাজকে কলুষিত করতে শেখায়। দেখা যায় সুযোগ পেলে অনেক রিকশাশ্রমিকও অধিক ভাড়া হাঁকে। কৃষি শ্রমিকও কাজে ফাঁকি দেয়। অফিসের পিয়ন, গৃহভৃত্য অপচয় ও অপব্যবহার করে। দেশের জন্য এটা একটি লজ্জাজনক ব্যাপার। দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবরই এগিয়ে। যা কিনা আমাদের জন্য বড় হুমকি। দুর্নীতি কোনো নতুন কিংবা দরিদ্র দেশের সমস্যা নয়। সমগ্র মানবজাতির জন্যই এটি একটি কঠিন সমস্যা। পৃথিবীর সব দেশেই দুর্নীতি কম-বেশি আছে। সমূলে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। কিন্তু সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা কোনো কঠিন কাজ নয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আইনের কার্যকর প্রয়োগ বাড়াতে হবে। সমাজের প্রতিটি মানুষকে সম্মিলিতভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে হবে। সরকারকে দুর্নীতিবাজদের রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে শুধু দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ও দৃটান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। কঠোর শাস্তির পাশাপাশি মানুষের মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তুলতে হবে। ঘরে বাইরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে হবে এবং ধর্মীয় অনুশাসনে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আগামীতে সমাজকে দুর্নীতি মুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তা নাহলে একসময় সমাজ থেকে সততা হয়তবা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সমাজ ক্রমান্বয়ে দুর্নীতিবাজদের খেলার মাঠে পরিণত হবে।