বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে হারিয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী। এছাড়াও বাংলাদেশে অন্তত ২১৯টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিপন্ন। এই তালিকার মধ্যে আছে উভচরসরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী। বনবিভাগের এক হিসাবে ৪২ প্রজাতির উভচরের মধ্যে ৮টি, ১৫৮ টি প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে ৬৩টি,৭৩৬টি প্রজাতির পাখির মধ্যে ৪৭টি, ১২৪টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ৪৩টির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বে এ পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমেছে দুই- তৃতীয়াংশ। বন্যপ্রাণীরা নিজেদের অন্দরমহলেও (গহীন বন) নিরাপদ নয়। প্রতিনিয়ত এদের তাড়া করে ফেরে ‘মানুষ’। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন প্রাণী হত্যার সংবাদ উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমে। ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনি পালামৌ থেকে নেওয়া এ উক্তি প্রায় সবাই জানে। কিন্তু বনে প্রাণীরা নিরাপদ থাকছে না। প্রতি বছরই হত্যা করা হচ্ছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। ডাঙার সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতিকে হত্যার ক্ষেত্রেও বছরে বছরে তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। পানির সবচেয়ে বড় প্রাণী তিমির মৃত্যুর ক্ষেত্রে করোনার বছরটি সবচেয়ে ভয়াবহ বলেই ধরা হয়। এছাড়াও অন্যান্য বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাঁচারও তুলনামূলক বেড়েছে। ২০২০ সালে ১২টি হাতি হত্যা করা হয়। বেশিরভাগ হাতিকে হত্যা করা হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে ও গুলি করে। এ বিষয়ে সম্প্রতি ছায়া তদন্ত করেছে ৩৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের সমন্বিত ফোরাম বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ)। বনভূমি হলো বন্যপ্রাণীদের আবাস্থল। নগরায়ন, শিল্পায়ন এর ফলে বনভূমির আয়তন দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে ও বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। আসলে, বিপন্ন প্রাণীদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি তাদের আবাসস্থল উপর মানব আক্রমন। সৌভাগ্যবশত, বিশ্বজুড়ে সংরক্ষণের প্রচেষ্টাগুলি এই বিপজ্জনক প্রাণীকে বিভিন্ন ধরনের মানবিক চেষ্টার মাধ্যমে তাদের ক্ষয়ক্ষতির জনগোষ্ঠিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছে, যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ শিকার, দূষণ হ্রাস, এবং আবাসস্থল ধ্বংস করা, এবং বহিরাগত প্রজাতির প্রবর্তনের নতুন আবাসস্থলকে হ্রাস করা। প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীর জন্য বাস করার জায়গা থাকা উচিত। দুর্ভাগ্যবশত, মানুষ বিভিন্ন উপায়ে পশু আবাস ধ্বংস করে। শারীরিক অনাচার ছাড়াও, প্রাণীদের আবাসনের মানুষের উন্নয়ন পেট্রোলিয়াম পণ্য, কীটনাশক এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে প্রাকৃতিক ভূখন্ড-কে দূষিত করে, যা সেই এলাকার প্রাণীর এবং উদ্ভিদের জন্য খাদ্য উৎস এবং টেকসই আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস করে দেয়। ফলস্বরূপ, কিছু প্রজাতি নির্বিচারে ডুবে যায় এবং অন্যরা এমন এলাকায় ঢুকে পড়ে যেখানে তারা খাদ্য ও আশ্রয় খুঁজে পায় না। বন্যপ্রাণীদের টিকিয়ে রাখতে হলে চিত্ত বিনোদনের জন্য বন্যপ্রাণী শিকার থেকে বিরত থাকতে হবে। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন হতে হবে। কর্তৃপক্ষকে আরও নজরদারী বাড়াতে হবে এ বিষয়ে। তাহলে টিকে থাকবে বন্যপ্রাণী।