বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই দেশে বর্তমানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিশ্বের নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠনগুলো সারা বিশ্বে তাদের জাল বিস্তার করেছে। ফলে সন্ত্রাসবাদ বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক এবং আন্তঃমহাদেশীয় রূপ নিয়েছে। অর্থনীতিতে এই অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত দেশ গড়তে হবে। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। এই দেশে যতো আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তাতে সাম্প্রদায়িক চেতনা কখনোই বিস্তার লাভ করতে পারেনি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের জন্ম। সে কারণে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাথা তুলে দাঁড়ায় সকল অপশক্তির বিনাশে। এমন একটি দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তারে নানামহল নানা অপচেষ্টা অতীতেও চালিয়েছিল বর্তমানে চালাচ্ছে। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়, আদালতে, বিভিন্ন সমাবেশে গ্রেনেড ও বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এই ভয়াবহ হামলা আমাদেরকে শুধু বিস্মিতই করেনি, আতঙ্কিতও করেছিল। জঙ্গিবাদ মতাদর্শী বিভিন্ন সংগঠনের উত্থান একসময় পুরো জাতিকে আতঙ্কিত করলেও সময়ের ব্যবধা সে আতঙ্ক এখন আর আগের মতো তাড়িয়ে ফেরে না জনগণকে। এ ক্ষেত্রে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বর্তমান সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ জনগণকে আশ্বস্ত করেছে। এজন্য দেশের রাজনৈতিক মতাদর্শ ভুলে দেশের আপামর জনতার সাধুবাদ বর্তমান সরকার নি:সন্দেহে পেতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে যে ঘোষণা দিয়েছেন বা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা বাংলাদেশকে বড় রকমের বিপদ থেকে রক্ষা করছে বলা যায়। তবে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে জোরালোভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে কোনো উগ্রপন্থাই ভালো কোনো কিছুর জন্ম দিতে পারে না। বরং সমাজে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। বাঙালি জাঁতি দ্বিজাতিতত্ত্বের বিস্তারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি। একদিকে ধর্মীয় বৈষম্য, অপরদিকে জাতিগত বৈষম্য। বৈষম্য থেকে মুক্তি এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষার ভিত্তিতেই তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এমন একটি রাষ্ট্রের জন্য এদেশের মানুষ লড়াই করেছে, যুদ্ধ করেছে, যে রাষ্ট্রটির জন্ম হলে সব নাগরিকের জন্য সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থাৎ সমতা এবং সামাজিক মর্যাদাটি সুনিশ্চিত হবে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সন্ত্রাসবাদ দমনে ও ভবিষ্যৎ শান্তিপূর্ণ বিশ্ব নিশ্চিত করতে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সব বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বিদ্যমান সব সংঘাতের অবসান ঘটাতে হবে। ‘সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন, তাদের অস্ত্র সরবরাহের উৎস বন্ধ এবং তাদের আশ্রয় দান বন্ধের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের মতো ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবশ্যই বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। শান্তির সংস্কৃতি ও অহিংসা লালন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, সহনশীলতা বাড়াতে হবে, বৈচিত্র্যকে ধারণ করতে হবে, ধর্মীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে বৈষম্য ও শোষণ থেকে রক্ষা করতে হবে।’ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের কোথাও জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের আলামত দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দিতে হবে। আমরা এ ধরণের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে আর দেখতে চাই না বরং বাংলাদেশকে উন্নত ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।