দেশের সড়ক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সড়ক উন্নয়নে সরকারের বিপুল বিনিয়োগের বিষয়টি স্পষ্ট, তবে তা নিরাপদ চলাচল যে নিশ্চিত করতে পারেনি, এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। সড়কের বেহাল অবস্থার বিষয়টি মিডিয়ার নিত্যদিনের শিরোনামে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে ভয়াবহ যে বিষয়টি যুক্ত হয়েছে, তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট। অর্থাৎ এখানে সর্বত্র সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দারুণ অভাব রয়েছে। মোটরসাইকেলের চালকরা রাজধানীর বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরো চরমে নিয়ে যাচ্ছেন। মোটরসাইকেল চালকদের জন্য যেন কোনো আইন নেই। অনেক ক্ষেত্রে তারা সিগন্যাল তো দূরের কথা ভিআইপি সিগন্যালও মানেন না। আর রাজধানীর অধিকাংশ সড়কের ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে পথচারীরা কতটা অসহায় তা সহজেই অনুমেয়। মহানগর পুলিশ প্রশাসন ও বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর সড়কগুলোতে যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করার ব্যবস্থা রয়েছে এর ১০ গুণ বেশি যানবাহন চলে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নগরীতে অনেকটা বেপরোয়া গতিতে চলছেন মোটরসাইকেল চালকরা। ফুটপাতে মোটর বাইক চলাচল করায় প্রায়ই ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা।
রাস্তায় জ্যাম হলেই ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রসাশনও পিছিয়ে নেই। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করতে নতুন করে উদ্যোগ নেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু তারপরেও কোনো কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছে না। মেগাসিটি ঢাকায় প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। এতে তীব্র যানজটে দিশাহারা নগরবাসী। দিন যত যাচ্ছে, রাজধানীর সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ততই বাড়ছে। মোটরসাইকেল একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন এটি বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে। চার চাকার বাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ গুণ বেশি। মোটরযান অধ্যাদেশ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অ্যাক্ট অনুসারেও রাস্তায় বা জনগণের চলার জায়গায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যায় না। আপাতত এই আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। ঢাকার রাস্তায় অতিরিক্ত মোটরসাইকেল এবং বাহনটির যত্রতত্র ও বেপরোয়া চলাচল ঠেকাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এই ব্যাপারে গণসচেতনতাও বাড়াতে হবে। কেননা মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্যে আজকাল রাস্তাঘাটে বেরোনো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। যেকোনো সময় বিপদের আশঙ্কা থাকে। রাস্তাঘাটে বের হলেই মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বড়-ছোট সব মফস্সল শহরে বাইকের দাপাদাপি এখন সর্বত্র। রাস্তায় বের হলেই বাইকচালকদের সঙ্গে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে। কয়েক বছর আগেও এত বাইকের বাড়বাড়ন্ত ছিল না। অনেক সময়ই দেখা যায় একটি বাইকে তিন-চারজন একসঙ্গে উঠেছে। অনেকের মাথাতেই হেলমেট নেই। তার ওপর আবার একশ্রেণির মোটরসাইকেলচালক আছে, যারা মোটরসাইকেলের সাইলেন্সারে প্রযুক্তিগত কিছু অদলবদল ঘটিয়ে বিকট শব্দ সৃষ্টি করছে। গলি থেকে রাজপথ-সর্বত্রই তাদের যাতায়াত। রাস্তার পাশেই থাকে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল-ক্লিনিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান। যেখানে গাড়ি ধীরে চালানো এবং শব্দ না করার সতর্কবার্তা দেখি আমরা। কিন্তু তা মানছে কে? তাই বলতে হয়, একশ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল মোটরসাইকেলচালক ট্রাফিক আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাইকগুলো নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণবিধির নির্ধারিত শব্দসীমার অনেক ওপরে থাকে সেসব মোটরসাইকেলের শব্দ। শিশু থেকে বৃদ্ধ-প্রত্যেকের অসুবিধা হয় তাতে। যাঁদের হার্টের অসুবিধা রয়েছে, এমন শব্দে তাঁদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং উচ্ছৃঙ্খলভাবে যাঁরা বাইক চালান তাঁদের ভদ্র-নম্র ও শান্ত হতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারিও বাড়াতে হবে।