বিশ্বের জনসংখ্যা নির্ভূলভাবে গণনা করা খুবই কঠিন কাজ, তবে জাতিসংঘের গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যা ইতোমধ্যে ৮০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। জনসংখ্যার এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে দেশ হিসেবে চীনে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস। তবে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বার্ষিক প্রতিবেদনের হিসাবমতে, এখন ভারত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। শীর্ষ জনসংখ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় দেশ হিসেবে চীন ও ভারতে যৌথভাবে বিশ্বের ৩৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। ২০২২ সালে চীনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৪২ কোটি ৬ লাখ। অন্যদিকে ভারতের ছিল ১৪১ কোটি ২ লাখ। ২০২৩ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ৪৫ লাখ। শীর্ষ জনসংখ্যার দেশ ভারতে এখন জনসংখ্যা প্রায় ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ। আর পরের অবস্থানে থাকা চীনে রয়েছে প্রায় ১৪২ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ। ২০৫০ সালেও ভারত ও চীনের অবস্থান প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানেই থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার আকার ভিন্ন মাত্রা পাবে। ওই সময় ভারতের জনসংখ্যা হবে প্রায় ১৬৬ কোটি ৮ লাখ এবং চীনের কমে হবে প্রায় ১৩১ কোটি ৭ লাখ। ভারত ও চীনের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যার তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া,পঞ্চম অবস্থানে পাকিস্তান,নাইজেরিয়া রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে, এ ছাড়া সপ্তম স্থানে আছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল আর অষ্টম অবস্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৩০ লাখ। তবে ২০৫০ সালে জনসংখ্যা বেড়ে ২০ কোটি ৪০ লাখ হলেও জনসংখ্যার ভিত্তিতে অবস্থান হবে দশম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জনসংখ্যায় কেউ এগিয়ে যাচ্ছে, কেউবা পিছিয়ে যাচ্ছে। জন্মহার ও মৃত্যুহারের হ্রাসবৃদ্ধির কারণে কোনো দেশের জনসংখ্যার আকার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তারতম্য ঘটে থাকে। ফলে কোনো দেশে উচ্চ প্রজনন হার থাকলে, সে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিশ্বব্যাপী প্রজনন ও মৃত্যুহারের মাত্রা ও নিদর্শনে তারতম্য রয়েছে। বর্তমানে নারীরা সার্বিকভাবে কম সন্তান নিলেও কিছুকিছু অঞ্চলেপ্রজনন হার অনেক বেশি। তা ছাড়া আগের তুলনায় বৈশ্বিকভাবে আয়ুষ্কাল বাড়লেও উন্নত দেশের তুলনায় দরিদ্র বা স্বল্পোন্নত দেশে আয়ুষ্কাল সাত বছর কম। বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়লেও কোনো দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, আবার কোনো দেশে কমছে। এ নিয়ে আশঙ্কা বা দুশ্চিন্তা না করে একে দেখতে হবে প্রগতি ও উন্নতির প্রতীক হিসেবে, ব্যক্তিগত অধিকার ও পছন্দকে বেছে নেওয়ার আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হিসেবে। এ ক্ষেত্রে সংখ্যার চেয়ে ব্যক্তির অধিকার ও পছন্দই মুখ্য। ফলে জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি নয়; বরং সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি, প্রতিবন্ধকতা দূর করা, মানবাধিকার এবং ব্যক্তির প্রজননস্বাস্থ্যের অধিকার ও পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। জনসংখ্যার গুণগত উন্নয়নই হবে মূল শক্তি। তাই মানবপুঁজি সৃষ্টির মাধ্যমে বিশেষ করে টেকসই উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বিপ্লবোত্তর বিশ্বসমাজ বাস্তবতায় প্রযুক্তির অগ্রগতি বিশেষ করে জলবায়ু ও অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনবল ও উদ্যোগ গ্রহণ দরকার। দরকার জনসংখ্যাকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে সব চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কর্ম-উদ্যোগ গ্রহণ।