বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যয় ব্যক্তি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কেউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে কোস্টগার্ড সদস্যদের দেশপ্রেম ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বুধবার কোস্টগার্ডের নতুন পাঁচটি জাহাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলা করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বিরোধীদলে থাকার সময় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোস্টগার্ড আইন সংসদে পাস করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চল সুরক্ষিত রাখা এবং দেশের সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগাতেই কোস্টগার্ডকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধ থাকলেও সমুদ্রের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কোস্টগার্ডের বহরে ২০৩০ সালের মধ্যে শক্তিশালী এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে নিজস্ব জনবলে পরিচালিত হবে উপকূল রক্ষার এই বিশেষায়িত বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুটি জাহাজ দিয়ে জলদস্যু দমনের নামে কোস্টগার্ড গঠন করা হয়েছিল। আরও যে বহুমুখী দায়িত্ব রয়েছে কখনো বিএনপি সরকার তা অনুধাবন করেনি। আমরা যখন সরকার গঠন করে তখন কোস্টগার্ডকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেই। খুলনা শিপইয়ার্ড নেভির হাতে তুলে দিয়েছি, যাতে আমরা নিজেরা নিজেদের জাহাজ তৈরি করতে পারি। সমুদ্রসীমা অর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, সমুদ্রসীমা আমাদের যে অধিকার রয়েছে সে বিষয়ে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। ৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। ২০০১ সালে জাতিসংঘের আনফলে আমরা সই করি। আমাদের সমুদ্রসীমার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এটা প্রয়োজন ছিল। ২০০১ এ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসতে পারেনি, পরবর্তীসময় বিএনপি ক্ষমতায় এলে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আনফলে সই করার পর হাতে মাত্র ১০ বছর সময় থাকে। এই ১০ বছরের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে, আলোচনার মাধ্যমে অথবা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে দাবি উত্থাপন করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতাসীন, তখন আমাদের হাতে মাত্র দুই বছর সময় ছিল। ২০১১ সালের মধ্যে আমাদের এই দাবিনামা উপস্থাপন করতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাই। একদিকে মিয়ানমার আরেকদিকে ভারত। আমাদের এই দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের স্বার্থে বন্ধুত্ব সম্পর্ক বজায় রেখে, আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করি। প্রধানমন্ত্রী জানান যে, তার সরকারের লক্ষ্য হলো সমুদ্রসীমার সঙ্গে সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলকে সুরক্ষিত করা। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকেও সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে হবে। এসব বিষয় লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেই। শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। দুর্যোগে মানুষকে সাহায্য করা, উদ্ধার করা, এসব আমাদের কোস্টগার্ড দক্ষতার সঙ্গে করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা ইলিশ উৎপাদনে এক নম্বর। আগে দেশে জাটকা ধরা হতো। এগুলো আমরা প্রতিরোধ করি। ইলিশ রক্ষা করা বা জাটকা না ধরতে পারে সেক্ষেত্রে কোস্টগার্ড ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সরকারপ্রধান বলেন, ২০২৬-৩০ সালের মধ্যে এই বাহিনীতে সব আবহাওয়া এবং গভীর সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী আরও কয়েকটি জাহাজ সংযোজন করে কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হবে। ২০৩১-৪১ সালের মধ্যে কোস্টগার্ড হবে নিজস্ব জনশক্তিতে সম্পূর্ণ একটি স্মার্ট বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা সমুদ্রসীমার অধিকার প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের উপকূল অঞ্চলকে যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার, তার জন্য ১৯৯১ সালের আমরা বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় তার ওপর একটি বিল আনার জন্য সংসদে প্রস্তাব করেছিলাম। তখন সরকারে ছিলেন খালেদা জিয়া। আমাদের এই প্রস্তাবটা কণ্ঠভোটে নাকচ করে দেয়। তখন আমরা ডিভিশন ভোটের দাবি করি। ডিভিশন ভোটে আমরা জয়লাভ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাঙালি জাতিকে উন্নত জীবন দেওয়া- এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি সারাজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। আমাদের রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি অধিকারের জন্য তার সংগ্রাম। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়, বাংলাদেশ অরক্ষিত ছিল। ৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।