মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলীর নিয়োগ নিয়ে এন্তার অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলীর নিয়োগের রহস্য নিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, অভিভাবক সদস্যসহ নিয়োগ বোর্ডে অংশগ্রহনকারীরা সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নেননি কতৃপক্ষ। চাকুরি প্রত্যাশী মাসুদুর রহমান নামে এক শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অধিকার করলেও তাকে চাকুরি দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রার্থী মাসুদুর রহমান আদালতে পৃথক দু’টি মামলাও করেছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, গত ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পদে অংশগ্রহণ করেন মাসুদুর রহমান, ইউনুস আলী, জগদীস মল্লিক, জালাল উদ্দীনসহ ৯ প্রার্থী। অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত তারিখে যথারীতি ৯জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রার্থী মাসুদুর রহমান সর্বোচ্চ ৩৪ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। আর ৩৩.০৮ পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ইউনুস আলী। নিয়োগ বোর্ডের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েও মাসুদুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ইউনুস আলী চাকুরি পেতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য’দের মোটা অংকের রফাদফা ছাড়াও পেশি শক্তি ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে কমিটির সদস্যরা নিরুপায় হয়ে ফলাফল শীর্টসহ নিয়োগ বোর্ডের যাবতীয় কাগজপত্র কাটা-ছেঁড়া করে ইউনুস আলীকে প্রথম দেখিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রথম স্থান অধিকারী মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে যশোর আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর দেওয়ানী ১৬/২০১৭ এবং -সিআর ৫৪৬/২০।
একই সাথে ইউনুস আলীর নিয়োগ অবৈধ দাবী করে তৎসময়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য তাপস মন্ডল যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও মনোহরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কালীপদ মন্ডল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২২/১২/২০১৯ ইং তারিখ মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অবাক হলেও সত্য, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির তৎসময়ের সভাপতি আবদুল খালেক মোড়লও সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তিনি ১৫/০১/২০১৭ ইং তারিখে যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগে তিনি দাবী করেছেন, প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার না করলেও সংবদ্ধ একটি চক্রের প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ পত্র গ্রহন করেন। এ ছাড়া সরকারের বেতন-ভাতা গ্রহন করার সময় প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে নেন প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী।
প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলীর বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি এবং জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় বিদ্যালয়ের পরবর্তী ম্যানেজিং কমিটি গত ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পর্যালোচনা না করিয়া গত ২০২২ সালে ২৩ অক্টোবর তার বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করে নেন বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃপক্ষ। ইউনুস আলীর নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেই সময়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এস এম এমদাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একটি পক্ষের চাপের মুখে ইউনুস আলীকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হই।
এ ব্যাপারে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলীর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিষয়টি পত্রিকায় না লিখতে অনুরোধ জানান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ নাজমুল হকের সাথে প্রধান শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার অনিয়ম, দূর্নীতি এবং নিয়োগ জটিলতা সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। আমি সদ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, তৎসময়ে আমি এখানে ছিলাম না। তবে বিষয়টি আমি শুনেছি এবং জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগের একটি তদন্ত কপি আমার দপ্তরে পৌঁছিয়েছে। যেটা নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।