একবিংশ শতাব্দীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিপ্লবের এই যুগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুহূর্তের পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ এখন খুব সহজ হয়েছে। পুরো পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিচ্ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইদানীং আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। যা আমাদের জন্য আশীর্বাদের থেকে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দেখা যায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাই অসচেতন ও অসতর্ক। যা তাদের নিজের অনলাইন নিরাপত্তার জন্য হুমকি ডেকে আনার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবহারকারীর বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। ভালোর থেকে বর্তমানে খারাপ দিকটাই বেশি দেখা যাচ্ছে। দিনদিন অশ্লীল ভিডিও, আপত্তিকর কথা-বার্তা, অশ্লীল ফটো ইত্যাদি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। মানুষ স্বীকার হচ্ছে প্রতারণার। একের পর এক ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মতো অপরাধের ঘটনাও ঘটছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মধ্য দিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আরেকটি বড়ো সমস্যা হলো ভুল খবর বা গুজব, এইসব প্লাটফর্মের কারণে যা খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য একটি অসতর্কতামূলক মন্তব্যের কারণে অনেক সময় মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জরিমানা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই এই মাধ্যমগুলো ব্যাবহারে আমাদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। কিছু সহজ পদক্ষেপেই আমারা থাকতে পারি নিরাপদ। পার্টি, অনুষ্ঠান, কারো সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ যে কেউ চাইলেই এইসব তথ্য ব্যাবহার করে চুরি ডাকাতি থেকে শুরু করে অপহরণের মতো অপরাধ সক্সঘটন করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ তাতে করে হ্যাকাররা যেকোনো ধরনের সাইবার ক্রাইম করতে পারে ঐ নাম্বার ব্যাবহার করে। নিজের ব্যক্তিগত কোন ছবিও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ভুল বা গুজব খবর শেয়ারের কারণে কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর উপর বিরূপ প্রভাব পরে তাই কোন খবর বা ঘোষণা শেয়ার করার আগে সেটা সঠিক কিনা তা যাচাই করে তারপর শেয়ার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবচাইতে বেশি বিচরণ করে তরুণ সমাজ। তাই এর যথোপযুক্ত ব্যবহারের ব্যাপারে তাদের সবার আগে সচেতন হতে হবে। সর্বোপরি সোশ্যাল মিডিয়ায় কি শেয়ার করছি বা নিজের মতামতকে কীভাবে অন্যান্যের সামনে উপস্থাপন করছি সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। আমাদের উচিত বিনয়ী হওয়া এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ভালো কাজ দ্বারা অন্যান্যের উদ্বুদ্ধ করা।