স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’র অর্থ হলো ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনো’, যার অর্থ ‘লিটল গার্ল’ বা ‘ছোট মেয়ে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে লা নিনো বলা হয়। বিশ্বজুড়ে এল নিনোর আগমন ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। এল নিনোর প্রভাবেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছে সংস্থাটি। মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন হচ্ছে এবং চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তনের যে সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা তা থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, অতি উত্তপ্ত এই বিশ্ব আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে যায় তা উদ্বেগের। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী এল নিনো জলবায়ু পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে। এতে আবহাওয়া ও তাপমাত্রা চরম রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এল নিনোর প্রভাব হয়েছে গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি কম হয়েছে। তাপপ্রবাহ সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে ওই সময়ে। কিন্তু আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবার হঠাৎ করে বৃষ্টি বেড়ে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশে যেকোনো আবহাওয়া পরিস্থিতি চরম আচরণ করছে। অর্থাৎ গরমের সময় তীব্র তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টির সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হবে। হচ্ছেও তা-ই। এল নিনোর প্রভাব আঞ্চলিক খাদ্য নিরপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। কৃষিজ উৎপাদন হ্রাস এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়বে। খাদ্যের সংকট, মূল্যস্ফীতি ও ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া-এই সবকিছু একসঙ্গে মিলে সমাজে টানাপোড়েন বাড়তে পারে। তাছাড়া অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, আকস্মিক বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো ঘটার পরিমাণ আগের চেয়ে বাড়বে। এর ফলে উপকূলীয় জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং সরকারের দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যয়ও বাড়বে। তাই সরকার ও দেশের সাধারণ মানুষ সবাইকে এ বিষয়ে আগাম সতর্ক হতে হবে। আর এখন কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা অত্যাবশ্যক।