ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে নতুন প্রস্তাবিত আইনটি চরিত্রগত কোনো পার্থক্য না থাকলে শুধু নাম পরিবর্তন করা 'অর্থহীন'। বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তা প্রায় হুবহু প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনেও রাখা হয়েছে। দুটি আইনের বিষয়বস্তুও প্রায় একই রকমের। যেসব আপত্তি-উদ্বেগ ছিল, প্রস্তাবিত নতুন আইনেও সেসব দূর করা হয়নি। শুধু কিছু ক্ষেত্রে সাজা কমেছে এবং জামিনযোগ্য ধারা বেড়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রীসভার বৈঠকে নতুন এই সিদ্ধান্ত হয়। সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে প্রস্তাবিত আইনে কী কী আছে এবং কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত ও পরিবর্তন করে নতুন আইন করা হচ্ছে এবং কবে নতুন আইনটি সংসদে উঠবে, তা জানান। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। আইনটির বদলে সরকার নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ করবে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬-সহ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। এই আইনটি বাতিল বা সংশোধনের দাবি উঠেছিল দেশের বিভিন্ন মহল থেকে। বিরোধিতার মুখে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এই আইন কার্যকর করে সরকার। এরপর বিরোধী ও ভিন্নমত দমনে প্রায়ই এই আইন ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই আইনটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ হয়েছে ভিন্নমতের রাজনীতিক, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেও এই আইনের আনুপাতিক ব্যবহার বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই আইনের গুনগত কোন পরিবর্তনই আসে নি। এটা অনেকটাই লোকদেখানো। কিছু ক্ষেত্রে শাস্তি কমানো ও অজামিনযোগ্য কিছু ধরা জামিনযোগ্য করা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।' সাজা কমানোর কিংবা বাড়ানো কিংবা সাজার মাত্রা পরিবর্তনের ঘটনায় নাগরিকদের অধিকার বা সুরক্ষা হবে না। যেসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষায় খুব একটা কাজে আসবে না। প্রস্তাবিত নতুন আইনে সাজা কমানো ও জামিনযোগ্য ধারা বাড়ানোর বিষয়টি ইতিবাচক হলেও আইনের সংজ্ঞা আগের মতোই বহাল রাখা এবং বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন না আসায় অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনটিতে সে সব কালো অধ্যায় রয়েছে সেগুলো সুস্পষ্ট করা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। আর এটি সকলেরই কাম্য।