১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম কালিমালিপ্ত একটি দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কিছু দুষ্কৃতকারী সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণিত, বর্বর ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা। তবে এটি শুধু হত্যাকাণ্ড ছিল না। একটি ছিল সদ্য স্বাধীন ও জাতির অগ্রযাত্রাকে চিরতরে নিস্তব্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রও। সেদিন এই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিব, ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ৭১ এর প্রতিশোধ আর স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পথচলা থামিয়ে দেওয়াই ছিল জাতির পিতাকে হত্যার মূল লক্ষ্য। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী চক্র ৭১ এর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল, কারণ তিনি তদানীন্তন পরাশক্তি তথা বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে এক দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু কিছু স্বাধীনতা বিরোধী খুনি সেই বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করে বাঙালিকে আবার আবদ্ধ করে রাখতে চেয়েছিলো। ১৫ই আগস্টের ঘাতকদের সেই হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে বর্বরোচিত ও অমানবিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয় সেদিন প্রাণে বাঁচলেও পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। জাতির পিতার হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন ঘাতক বিভিন্ন দেশে পলাতক আছে। বাংলাদেশ সরকার দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারতে আত্মগোপন করা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদকে ঢাকার মিরপুর থেকে আটক এবং তার ফাঁসি কার্যকর করেছে, যা দেশ ও জাতির জন্য অনেক বড়ো উপহার। যতদিন এই বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, এই রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু তাঁর মহান কীর্তির জন্য ততদিন বেঁচে থাকবেন। যতদিন এই পৃথিবীতে বাঙালি জাঁতি বেঁচে থাকবে, ততদিন পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম তাদের হৃদয়ে থাকবে।