সড়ক-মহাসড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা নিয়ে বহু বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একাধিকবার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেন ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক সড়কে চলবে না। সংস্থার ওয়েব সাইটে এ-সংক্রান্ত গাইড লাইনে বলা হয়, পুরনো গাড়ি জব্দ ও ধ্বংস করার পাশাপাশি যেসব মালিকের মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি রয়েছে, তারা নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত সড়ক বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয়, এ সিদ্ধান্ত থেকে সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে বিভাগ এবং বিআরটিএ সরে এসেছেন এবং নতুন সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যেতে বলা হয়েছে। তবে সরকারের এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিৎ- পুরোনো যানবাহনের কারণে যেমন সড়ক দুর্ঘটনা হয়, তেমনি পরিবেশদূষণ বাড়ে। মেয়াদোত্তীর্ণ এ লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন সড়কে চলাচল নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন পরিবেশবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ৭ মের সিদ্ধান্তে তাঁরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেই আশ্বস্ত হওয়া আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেছে সরকার। ফলে ২০ বছরের পুরোনো বাস এবং ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক অবাধে চলতে পারবে সড়কে। জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পরিচালনায় যুক্ত একাধিক মালিক সমিতি পুরোনো যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাদের সংঘবদ্ধ অবস্থানের কারণে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং মন্ত্রণালয় আগের প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছেন। কেননা, ২০ বছরের সীমা নির্ধারণ করা হলে ৩৩ হাজার ১৭৪টি বাস-মিনিবাস রাস্তা থেকে উঠে যাবে। আর ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাকের সংখ্যা ৩০ হাজার ৬২৩। এ ছাড়া এর আগে নছিমন, করিমন, ভটভটির মতো যানবাহন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলতে না দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সিদ্ধান্তও কার্যকর হয়নি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বিরোধিতার কারণে। এ ক্ষেত্রে জনগণের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের দিকটি আমলে না নেওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে সরকার একের পর এক ভালো সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় জনগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পুরোনো যানবাহন চলাচলে কেবল জনস্বাস্থ্যই হুমকির মুখে পড়ছে না, দুর্ঘটনার মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে স্বার্থান্বেষী মহলের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ১৭ মের সিদ্ধান্তে অটল থাকা। পুরোনো যানবাহন তুলে নিলে জনগণকে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা।