পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার অর্থনীতির চাকা যেনো মুখ থুপড়ে পড়ার উপক্রম হওয়ায় কাজের অভাবে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে কষ্টের হাহাকার শোনা যাচ্ছে।
দেশের সর্বউত্তরের তেঁতুলিয়া উপজেলার অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি মহানন্দা নদীর নূড়ি পাথর, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও সমতলে সবুজ চা বাগান। পঞ্চগড় জেলা শুধু নয় পাশবর্তী নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁও জেলার কয়েক হাজার গরীব মেহনতি মানুষ তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন জনের বাসা-বাড়িতে ভাড়া থেকে দিনমজুরের কাজ করেন। এই শ্রমজীবি মানুষের কাজের প্রধান উৎস হলো মহানন্দা নদী থেকে বালু কওয়ারী করে নূঁড়ি পাথর সংগ্রহ করা। এই নূড়ি পাথর ক্রয়-বিক্রয়ের সংগে জড়িত পাথর সটিং ও নেটিং কাজে আরও কয়েক হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে ভারত-বাংলাদেশ ঘেঁষা সীমান্ত জিরোলাইন দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা নদীতে বিএসএফ’র বাধায় পুরাতন বাজার থেকে রণচন্ডি পর্যন্ত পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এঅঞ্চলের সাধারণ মানুষের কর্মের অভাবে নাভিশ্বাস উঠেছে। শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন চালুর দাবীতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি বরাবরে প্রতিনিয়ত ভিড় করছে। কিন্তু বিজিবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় শ্রমিকরা নদীতে পাথর কওয়ারী করতে নামতে পারছে না।
এদিকে রাজস্ব শূল্ক বৃদ্ধি করায় ব্যবসায়ীরা লকসানের অজুহাতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটানের এলসি পাথর আমদানী-রপ্তানি প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রেখেছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় সেখানে পাথর লোড-আনলোডিং কাজে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ একমাস ধরে পাথর আমদানি না হওযায় কাজের অভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে। অপরদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলার অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনাময় শিল্প সমতলে চা উৎপাদন। কিন্তু অর্থকরী ফসল উৎপাদনে সার ও কীটনাশকের দাম বাড়লেও বাড়েনি সবুজ কাঁচা চা পাতার দাম। ক্ষেত্রে উৎপাদিত সবুজ চা পাতা বিক্রি দেয়ার জন্য চা চাষীদের কারখানা মালিকদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিতে হয়। এরপরও যদি পাতা দেওয়ার অনুমতি পান সেখানে ৩০% থেকে ৪০% কর্তন হারে ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকা দরে পাতা বিক্রি দিয়ে জমির খরচের টাকাও উঠে না। ফলে অনেক চা বাগানের মালিক বর্তমানে বাগানের পরিচর্চা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ ছোট খাটো বাগান উপড়ে ফেলে দিচ্ছে। যে কারণে চা শিল্পের সংগে জড়িত অনেক চা শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
রোববার সকালে মহানন্দার তীরে কথা হয় পুরাতন বাজারের পাথর শ্রমিক আঃ জব্বার, জহিরুল এবং সর্দারপাড়ার পাথর আশরাফুলের সংগে তারা জানান, বাজারে নিত্যপণের দাম লাগামহীন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে পারছি না। কাজের অভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দূর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
চা বাগানে পাতা টাকা শ্রমিক আঃ লতিফ ও রমজান আলী জানান- কারখানার মালিকরা সবুজ পাতার ন্যায্য দাম না দেওয়ায় অনেক বাগান মালিক ক্ষেত্রে পরিচর্চা করছে না। যে কারণে আমাদের কাজের পরিধি কমে গেছে। অনেক শ্রমকি বেকার হয়ে বসে আছি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কুলি শ্রমিক মানিক, আঃ রহমান ও হবি বলেন প্রায় ০১ মাস ধরে স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় কাজের অভাবে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে বসেছি।
তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারের গালামাল ব্যবসায়ী মঞ্জুর আলম জানান- মহানন্দায় পাথর তোলা বন্ধ, সবুজ কাঁচা চা পাতার দাম নাই, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ এসব মিলে সাধারণ মানুষের হাতে কাজ নাই। টাকার অভাবে দোকানে বেচা-কেনা কমে গেছে। অনেকে আগে বাকি নিয়ে গেছে সেই টাকাও দিতে আসছে না।
হোটের ব্যবসায়ীরা জানান- মহানন্দার পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় হোটেলের বেচা-কেনা নাই বললে চলে। এসব মিলে তেঁতুলিয়ার অর্থনীতির চাকা যেনো মুখ থুপড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান (ডাবলু) বলেন, মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে বসেছে। পাথর উত্তোলন চালুর জন্য ইতোমধ্যে কযেকবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সংগে আলোচনা করেছি। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে পঞ্চগড়-আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মজাহারুল হক প্রধান পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সহ বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন মহলের সংগে কথা বলেছে। যেহেতু মহানন্দা একটি সীমান্তঘেঁষা নদী তাই বিজিবি ও বিএসএফ’র যৌথ সহানুভূতি ও অনুমতির দিলে দু’চারদিনের মধ্যে পাথর উত্তোলন চালু হবে।
উপজেলার জনসাধারণ ও সচেতনমহল মহানন্দা নদীর পাথর উত্তোলন চালু দাবীতে বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করছে।