চিকিৎসকরা সেবার মানসিকতা নিয়ে রোগীর চিকিৎসা করবেন-এটাই নিয়ম। রোগীকে তারা সারিয়ে তুলবেন, এটাই হওয়া উচিত তাদের ব্রত কিন্তু দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ চিকিৎসকই রোগী দেখছেন ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে। মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সারাদেশে চিকিৎসার নামে চলছে ভয়াবহ প্রতারণা। সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে নামে-বেনামে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও এক শ্রেণির দালালদের কমিশন বাণিজ্যে জমজমাট ওই ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টক সেন্টারগুলো। বেশীরভাগ সময়ই দেখা যাচ্ছে সরকারি এই হাসপাতালে এসে ডাক্তারের কাছে গেলে রোগীদের প্রয়োজন ছাড়াই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডাক্তার নির্দিষ্ট করে বলে দিচ্ছেন কোন প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষাগুলো করাতে হবে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করতে গেলে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গলাকাটা বিল ফলে দেশে ক্রমাগত বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। আবার অনেকসময় দেখা যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা প্রকাশ্যে হাসপাতালের কম্পাউন্ড থেকে রোগীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে নিজ নিজ ক্লিনিকে। এতে করে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে দেশের মানুষের একটি বড় অংশ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা ও হাসপাতালগুলোর অতি মুনাফালোভী কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্যসেবায় আস্থা হারাচ্ছে দেশের মানুষ। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় মানসম্পন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ ২৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীর একটি দল থাকা দরকার। কিন্তু দেশের প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ৩ দশমিক ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। আর এই সঙ্কটের বেশীরভাগই হলো সরকারী হাসপাতাল গুলোতে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি মানসম্পন্ন সেবার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যায়, প্রতিবছর নানা অজুহাতে ৪০ শতাংশ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকে। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের স্বাস্থ্যে উন্নয়নের জন্য জিডিপির ৫ শতাংশের ব্যয় করতে হয়। সেখানে আমাদের দেশে স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে জিডিপির এক শতাংশের কম। এটিও একটি বড়ো অন্তরায় দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে। তাই এখনি সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসরত সব মানুষকে চিকিৎসা কার্ড দিতে হবে এবং এই কার্ডের মাধ্যমে সব সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা বিনামূল্যে দিতে হবে। চিকিৎসক-নার্সসহ চিকিৎসাসেবায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে যাতে করে কেউ ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ করতে না পারে। সরকারি হাসপাতালে দালাল প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে দরকারে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করতে হবে। সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে তাদের জন্য নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাওন্সের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে টেস্ট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে, শুধু দরকারেই রোগীকে টেস্ট দিতে হবে। ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হলে চিকিৎসা ব্যয় বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য জিডিপির পরিমাণ বাড়াতে হবে। মানুষকে সঠিক সেবা দিতে গেলে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ দিতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ এবং ওষুধের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য আইন করতে হবে। আর তাহলেই চিকিৎসার নামে এই বাণিজ্য বন্ধ করা সম্ভব হবে।