ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ একটি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। বর্ষায় রাজধানীবাসির কাছে অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এই জলাবদ্ধতা। টানা বৃষ্টি হলেই রাজধানীর অনেক স্থানে ডুবে যায় কয়েক হাত পানির নিচে। নগরজীবন অচল হয়ে পড়ে। জলাবদ্ধতার সঙ্গে নগরীতে বাড়ে যানজটের ভোগান্তি। জলাবদ্ধতা ও যানজটের কারণে শহরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহানো বর্তমানে একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দেখা যায়, সড়কের যেসব স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, সেসব স্থান দিয়ে যানবাহন চলাচল না করায় অন্যান্য সড়কের ওপর চাপ বাড়ে। ফলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগরীর মোট আয়তনের ২০ থেকে ২৫ ভাগ জায়গায় রাস্তা থাকা জরুরি। সেক্ষেত্রে রাজধানীতে রাস্তা আছে সাত থেকে আট ভাগ। আবার এই আট ভাগের অনেক অংশের রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে, ফলে সেখানে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ আর সেখানে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর সড়কগুলোরও ক্ষতিসাধন হয়। নিম্নমানের রাস্তার ওপর অল্প সময় পানি জমে থাকলে সড়ক কাঠামোর নড়বড়ে হয়ে যায়। সড়কের উপরিতলের বিটুমিন, খোয়া, ইট-সুরকি উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয় ছোট-বড় গর্তের। ঢাকা শহরে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রগুলো ভরাট হয়ে গেছে। শহরের অধিকাংশ খাল মরে গেছে, পুকুর, ডোবা ও জলাশয় দখল হয়ে গেছে। যে কটি এখনো টিকে আছে, সেগুলোয় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। বিগত বছরগুলোতে রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতার চিত্র পর্যবেক্ষণে লক্ষ করা যায়, ঘণ্টায় মাত্র ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই শহরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা তলিয়ে যায়। এই জলাবদ্ধতা শুধু জনজীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি করে না, যানজটে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন। দুই সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থার উন্নয়ন কাজে কেবল সমন্বয়হীনতা নয়, পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাবের কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কর্তৃপক্ষকে এখনি নিতে হবে স্থায়ী পরিকল্পনা। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত এবং তা সার্বক্ষণিকভাবে পরিষ্কার রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে রাজধানীর চারপাশের নদণ্ডনদীগুলো সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকার চারপাশের চারটি নদণ্ডনদী-বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু এখন প্রায় মুমূর্ষু। প্রতিটি নদণ্ডনদী মারাত্মকভাবে দখল ও দূষণের শিকার। এই নদণ্ডনদীগুলো দখল মুক্ত রাখতে হবে। খাল উদ্ধারের পাশাপাশি তদারকি কার্যক্রমও বাড়াতে হবে। অন্যথায় খালগুলো ফের দখলে চলে যাবে। এই অভিশাপ দূর করতে সরকারের পাশাপাশি নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার। এই ব্যবহৃত পলিথিনগুলো বৃষ্টির সময় ধুয়ে জমা হয় পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ কিংবা নালার মুখে। এতে করে পানি নিঃসরণের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাই একের দায় অন্যের ওপর না চাপিয়ে নাগরিক সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই হতে পারে জলাবদ্ধতার মতো সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ।