ঢাকার যানজট ও জনদুর্ভোগ নিরসনে বছরের পর বছর ধরে সরকার এবং সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে নানাবিধ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। প্রতিবছরই ঢাকার যানজট এবং রাস্তায় গাড়ির গড় গতিবেগ কমছে। এখন রাজধানীতে যানবাহন চলাচলের গতি মানুষের পায়ে হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারের কাছাকাছি চলে এসেছে। এই যানজটের পেছনে প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। রাজধানীতে বছরজুড়েই চলছে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি। সিটি কর্পোরেশন, মেট্রোরেল স্থাপন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতার ফলে একই রাস্তা বারবার খননে যত্রতত্র মাটি ও ময়লা-স্তূপাকারে মাসের পর মাস ফেলে রাখায় জনদুর্ভোগে পৌঁছেছে চরমে। আর বৃষ্টি হলে অবস্থা হয় আরো নাজুক, সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। এতে করে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কাজের কারণে ঢাকার প্রায় ৪০ শতাংশ সড়ক এখন ক্ষতবিক্ষত। দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তার অর্ধেকটা গর্ত করে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। মানছে না কোনো নিয়মনীতি, উপেক্ষিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তও। রাজধানীর সড়ক খনন নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী, দিনে খনন কাজ বন্ধ রাখাসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে জরিমানার বিধান রয়েছে। নীতিমালায় আছে, রাজধানীতে দিনের বেলায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। বর্ষা মৌসুমে (মে-সেপ্টেম্বর) কোনো সড়ক মেরামত করা যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে খনন করতে হলে মূল ক্ষতিপূরণসহ অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ফি দিতে হবে। আর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির জরিমানা দিতে হবে মূল খরচের পাঁচগুণ। এত আইন ও নিয়ম থাকা সত্ত্বেও দিনেদুপুরে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির নামে এই বিভীষিকা। ঢাকা ওয়াসা, তিতাস, টিঅ্যান্ডটি এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে বছর জুড়েই রাস্তা খুঁড়ে সংস্কার ও নতুন লাইন সংযোগ দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় বছরে একাধিকবার সড়ক খনন করতে দেখা যায়। সড়ক খুঁড়ে তা সেভাবেই ফেলে রাখা হয়। এক সংস্থা খোঁড়ার পর আরেক সংস্থা খোঁড়া শুরু করে। এতে বৃষ্টির পানি জমে খননের জায়গা পরিণত হচ্ছে মৃত্যুফাঁদে। এমতাবস্থায় একমাত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে নিয়োজিত সংস্থাগুলো সমন্বিত ভাবে কাজ করলেই রাজধানী বাসি এই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পাবে। তাই রাজধানীতে যে অপরিকল্পিত সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, তা এখনি বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রণীত নীতিমালা মেনে চলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে হবে। যখন খুশি তখন সড়ক খোঁড়ার অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।