আজ ৩০ আগস্ট। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে দিবসটি পালিত হচ্ছে আজ। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সনদ হিসাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সরকারের কোনো পর্যায় বা কোনো শাখার কর্মকর্তা অথবা সরকারের পক্ষে কিংবা তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন অথবা সম্মতি নিয়ে কোনো বেসরকারি সংগঠিত গোষ্ঠী কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার, আটক বা অপহরণ করে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করলে এবং তাকে আইনের পরিধির বাইরে রেখে দিয়ে তার অবস্থান জানাতে অস্বীকার করাই হচ্ছে গুম। ঐতিহাসিকভাবে গুমের উৎপত্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে জার্মানির নাৎসি বাহিনী দ্বারা। তারপর ক্রমান্বয়ে পোল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়ার (তৎকালীন) মতো সব বিজিত দেশের লাখো মানুষকে গুম করে এবং পরে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময়ে সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার হয় ইউরোপের ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা। বিশ্বে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়ে যায়। এসব ঘটনার বেশির ভাগের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। এ ছাড়া বন্য প্রাণী চোরাচালান, মানব পাঁচার, প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি, এমন আরও অনেক অপরাধী চক্র মানুষের এভাবে হারিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর বহু লোক নানা কারণে গুমের স্বীকার হয়। এক প্রতিবেদনে দেখা ২০১৬ সালে গুমের শিকার হয়েছিলেন ৯৭ জন, ২০১৭ সালে ৬০ জন, ২০১৮ সালে ৩৪, ২০১৯ সালে ১২, ২০২০ সালে ৬ জন ও ২০২১ সালে ৭ জন। আর ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত গুমের শিকার হয়েছেন ২ জন। এদের মধ্যে ২০১৯ সালে যে ১৩ জন গুমের শিকার হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৪ জন ফিরে এসেছেন, একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং নিখোঁজ আছেন ৮ জন। ২০২০ সালে যে ৬ জন গুমের শিকার হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, দুজন এখনও নিখোঁজ। ২০২১ সালে যে ৭ জন গুমের শিকার হয়েছেন, তাদের ৬ জনকে পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একজন এখনও নিখোঁজ। গুম একটি মানবতা বিরোধী অপরাধ। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুমের শিকার সকল নিখোঁজ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি গুমের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করতে হবে। গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর করতে হবে। সর্বোপরি এ ধরনের ঘটনার বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন কাঠামোতে পরিবর্তন করতে হবে।