বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হলো আমাদের সুন্দরবন। আর সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর মধ্যে মূল আকর্ষণ হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সারা বিশ্বে বাঘের চামড়াসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চোরাকারবারিদের নজরে রয়েছে এই বাঘ। বাঘের বে-আইনী চোরাচালান ও পাঁচারের একটি প্রধান প্রধান স্থান হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত সাধন হয়েছে এবং বাংলাদেশ বাঘের বে-আইনী ব্যবসায় আগের চেয়ে প্রচুর বেশি বেড়েছে। বে-আইনী শিকারের কারণে বাংলাদেশের বাঘ বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সুন্দরবনের বাঘের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া না গেলেও মোটামুটি ৩৫০ থেকে ৫০০ বাঘ রয়েছে বলে মনে সাধন হয়। চীন ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাহিদা থাকায় সুন্দরবন থেকে এই পাঁচার করাটা চোরাচালানকারীদের মূল লক্ষ্য থাকে। বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান নামে সরকারের এই পরিকল্পনার মধ্যে সুন্দরবন থেকে বাঘ পাঁচার রোধ করার জন্যে গ্রহণ সাধন হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বন বিভাগ ও নিয়ম শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাহারা দেওয়া হচ্ছে, তারপরেও কি করে সুন্দর বন থেকে বাঘ পাঁচার হচ্ছে? গবেষকদের খোঁজ ও জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, বিশ্বের ২০ টি দেশে সুন্দরবনের বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাঁচার হচ্ছে। বাঘের চোরাচালান ও পাঁচারে ১৫৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। তাহলে কেনও এই দস্যুদের ধরা হচ্ছে না ও আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। হয়তো বাংলাদেশ এ ব্যাপারে তৎপর হলে বাঘ হত্যার তৎপরতা বন্ধ সাধন সম্ভব হতো। তাই এ ধরনের পাঁচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সুন্দরবন বাংলাদেশের দুর্গ। সরকারের উচিত পশু পাঁচার বন্ধে যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেয়া, বনবিভাগের জনবল বৃদ্ধি সাধন এবং অপরাধীদের নির্মম শাস্তির আওতায় আনা। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী বাইরে থেকে কেউ গিয়ে পাঁচার করতে পারে না, যদি না স্থানীয় কারও সহায়তা থাকে। সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকায় সামান্য অসাধু মানুষ বাইরের বাঘ পাঁচার চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে সুন্দরবন থেকে বাঘ পাঁচার করে। প্রচুর সময় গাছ কাটতে এসে গাছের সঙ্গে পশু পাঁচার হয়ে যায়। এই পাঁচারকারী চক্রের সঙ্গে সামান্য প্রভাবশালী মহলও জড়িত। এমনিতেই বন বিভাগের পর্যাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। তারপরও সামান্য অসাধু কাজের ব্যাপারে প্রধান ব্যক্তি সুন্দরবনের পশু পাঁচারের সঙ্গে জড়িত। সরকারের উচিত এ বিষয়ে নির্মম ব্যবস্থা নেয়া। তাহলেই সুন্দরবনের বাঘ বা অন্যান্য পশু পাঁচার বন্ধ সাধন সম্ভব হবে।