বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে দুই ছাত্রীকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও গত দশদিনেও তা জমা দেওয়া হয়নি। এমনকি কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে মঙ্গলবার সকালে কলেজ অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, তদন্তে স্বচ্ছতার জন্য কমিটির সদস্যরা আরো সময় চেয়েছে। ইতোমধ্যে তারা লিখিতভাবে সময় চেয়ে আবেদনও করেছে। অধ্যক্ষ আরও জানান, তদন্ত শেষ না হলেও শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্র এবং ছাত্রী হোস্টেলগুলোর সুপারদের দায়িত্ব পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে নতুন শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হোস্টেল কমিটিতে এখনো কোন শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হয়নি বলেও অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট দিবাগত রাতে কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে হোস্টেল সেক্রেটারি ডেন্টাল সপ্তম ব্যাচের ছাত্রী ফাহমিদা রওশন প্রভা এবং সহ-সেক্রেটারি এমবিবিএস ৫০তম ব্যাচের ছাত্রী নীলিমা হোসেন জুঁইয়ের নেতৃত্বে তৃতীয় বর্ষের দুই ছাত্রী র্যাগিংয়ের শিকার হন। খবর পেয়ে ২৬ আগস্ট সাতজন সাংবাদিক কলেজ অধ্যক্ষের রুমে সংবাদ সংগ্রহের জন্য যান। এ সময় র্যাগিংয়ের ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় হোস্টেল সুপার সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সাহা, ডা. মাসুম বিল্লাহ, র্যাগিংয়ের নেতৃত্ব দেওয়া দুই ছাত্রীর স্বামী ডা. আতিক ও আজিম হোসেন। র্যাগিংয়ের অভিযোগ তদন্তে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী ডা. প্রবীর কুমার সাহাসহ চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়। কমিটিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও দশদিনেও তারা প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এমনকি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদও এখনো সম্পন্ন হয়নি। এনিয়ে সর্বমহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, শুরু থেকেই তদন্ত কমিটি নিয়ে বিতর্কে জড়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কার্যক্রমে ধীরগতি সেই বিতর্ক আরো টেনে ধরেছে। র্যাগিংয়ের ঘটনা আড়াল করতে চেয়েছিলেন ছাত্রী হোস্টেলের সুপার ডা. প্রবীর কুমার সাহা। তাকেই রাখা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে। ফলে তদন্ত কমিটিকে তিনিই বিপথে চালনার সৃষ্টি করছেন কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, র্যাগিংয়ের যে ঘটনা ঘটেছে তা একেবারেই স্পষ্ট। অথচ এটা নিয়ে তদন্ত কমিটি অহেতুক সময়ক্ষেপণ করছে। এর পেছনে ভিন্ন কোন কারণ থাকতে পারে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা হোস্টেলগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে হলেও বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন। এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশার বলেন, তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে কমিটির সদস্যরা অধিকতর তদন্ত এবং স্বচ্ছতার জন্য লিখিতভাবে আরো কিছুদিন সময় চেয়েছে।