গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর ও নবাবগঞ্জ গ্রামের ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নরবড়ে কাঁঠের সাঁকো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশামত সদর ও নবাবগঞ্জ গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার শাখা নদী। আর সেই শাখা নদী পারাপারের জন্য স্বাধীনতার পর থেকে ২০ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। তবে এখন আর সে নৌকাও দেখা যায় না। কারণ সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি কাঠের সাঁকো। নড়বড়ে এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করে দু-পাড়ের ২০ হাজারেও বেশি মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এই কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় প্রায়শই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা। স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম খলিলুল্যাহ তিস্তার শাখা নদীর উপর ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ ও স্থানীয় এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সহযোগিতায় সাঁকোটি সংস্কার করা হয়। এতে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা ও উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সাথে চরাঞ্চলের মানুষজনের যাতায়াতের পথ সুগম হয়। এতে করে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মানও বেড়ে যায়। এমনকি ছোট-খাটো যানবাহনে মালামাল ও কৃষিপণ্য পরিবহন করা হয় এ সাঁকো দিয়ে। এছাড়াও স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরাও নির্বিঘেœ যাতায়াত করে থাকেন এ সাঁকো দিয়ে।
এদিকে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ঢলে কচুরি পানার চাপে কাঠের সাঁকোটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় চলাচলের উপযোগী করতে কয়েকদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে কচুরি পানা অপসারণের কাজ করছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। চরাঞ্চলের মানুষের উন্নত জীবন যাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে সাঁকোটির স্থানে সরকারিভাবে ব্রীজ নির্মাণের দীর্ঘ দিনের দাবি এলাকাবাসীর। স্কুলছাত্র মো. আমজাদ মিয়া বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন এই সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। এখানে একটা ব্রিজের জরুরি প্রয়োজন। কৃষক রেজাউল করিম বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকরা অনেক কষ্ট করে ফসল ফলায়। যাতায়াতের সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে আমরা ফসলের ন্যায্য দাম পাইনা। এইখানে একটা ব্রিজ হলে আমাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে পারবো, তখন পণ্যের ন্যায্য দামও পাব। তালুক বেলকা গ্রামের বাসিন্দা ও মুদি ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, নদীতে ব্রিজ না থাকায় দোকানের মালামাল নিয়ে আসতে খরচ বেশি পড়ে। ব্রিজ হলে খরচ অনেকাংশেই কমে আসবে। ইউপি সদস্য মো. হাফিজার রহমান বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের একটাই দুঃখ এই তিস্তা নদীর শাখাটি। দীর্ঘদিন ধরে কাঠের সাঁকো পারাপারে সমস্যা হচ্ছে। সরকারিভাবে স্থায়ী একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে। বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, ওই স্থানে একটি কাঠের সাঁকো করে দিয়েছি। একটি স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. শামছুল আরেফীন খান বলেন, ওই স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ওই স্থানে ব্রীজ নির্মাণ করা হবে।