তিস্তার ভাঙনে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন। বাড়িঘর সব নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। অশ্রুসিক্ত হওয়া মানুষগুলোর দিকে তাকানো যায় না। অনেকে ঘরের অবশিষ্টাংশে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও বাস করছেন। তিস্তার ভাঙন রোধে স্থায়ী কোন ব্যবস্থা না থাকায় পানি বৃদ্ধি ও কমার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র হয়ে উঠছে ভাঙন। এতে করে এ বছর ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার। কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা চললেও তিস্তার স্থায়ী ভাঙন রোধে মহাপরিকল্পনা আর সমীক্ষার মধ্যেই আটকে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ বছর রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টি কম ছিল। উজানের পানিও আসে কয়েক দিন পরপর। পানি কম হলেও ভাঙন কম নেই, বরং কিছুটা বেশি। প্রতিবছর কতগুলো বাড়ি ভাঙে, কত আবাদি জমি নদীতে যায়, কোনো পরিসংখ্যান নেই। অনুমান করা যায়, ৪০ থেকে ৫০ হাজার বাড়ি বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লাখো গাছ ভেসে যায় নদীতে। বলতে গেলে ক্ষতির অর্থমূল্য শত শত কোটি টাকা। এ বছর বর্ষার শুরুতেই খবর পাঁচ্ছিলাম, তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিস্তা দীর দুই পাড় জুড়ে ভাঙন অব্যাহত থাকায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে দিশা পাঁচ্ছেন না মানুষজন। ভিটে মাটি হারানো পরিবারগুলো তাদের শেষ অবলম্বনটুকু রক্ষা করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও মিলছে না স্থান। খুব অল্পসংখ্যক মানুষ আছেন, যাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। অধিকাংশই চরম বিপদে পড়েন। কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হন। কেউ জমি কিনে ঘর তোলেন। কেউবা জমি ভাড়া নেন। এ অবস্থায় তিস্তার ভাঙন রোধের জোর দাবি জানান সর্বস্ব হারানো অসহায় লোকজন। যদিও বর্তমান সরকার অনেক মেগা প্রকল্প নিয়েছে, যার একটিও আবার রংপুর বিভাগে নেই। অনেকেই মনে করেন, রংপুরের জন্য সরকার এত বড় প্রকল্প গ্রহণ করবে না। তিস্তাকেন্দ্রিক এত বড় প্রকল্প শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে-এ ভরসা করা কঠিন। তবে সরকার ইতোমধ্যেই সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে রংপুরবাসীর মনে সংশয় তৈরি হয়, এ ঘোষণা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি? তবে আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ সরকার, মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, খুব দ্রুত তিস্তার ভাঙন-বন্যা রোধের ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং ভাঙন ও বন্যা রোধ শতভাগ সম্ভব না হলেও সর্বোচ্চ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তিস্তা-তীরবর্তী জনজীবন তথা তিস্তার সুরক্ষার জন্য সরকারকে অবশ্যই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই অর্থের জন্য বিদেশের ঋণের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় অর্থায়নে হলেও করতে হবে। তিস্তা নদী সুরক্ষায় যে টাকা ব্যয় হবে, নদীর ভাঙন আর বন্যা রোধের মাধ্যমে এক বছরেই তার চেয়ে অনেক বেশি টাকার সম্পদ রক্ষা হবে।