দেশে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে নির্যাতিত হচ্ছেন। দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের পরিসংখ্যান দিনেদিনে বেড়েই চলছে। ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকি, মামলা-মোকদ্দমা, মারাত্মক শারীরিক নির্যাতনে জখম থেকে শুরু করে গুম কিংবা খুন নির্যাতনের এমন কোনো ধরন নেই যার শিকার হচ্ছেন না সাংবাদিকরা। কিন্তু সেই অনুপাতে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হচ্ছেনা। দেখা যাচ্ছে এই বিচারের অভাবেই সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতনের ঘটনা বারবার ঘটে চলছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৬০ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করিতে গিয়া বিভিন্ন রকমের বাধার সম্মুখীন হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১১৯ জন সাংবাদিক শিকার হয়েছে বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলার। তার ভিতর ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ২৯ জন এবং চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার ৮ জন করে সাংবাদিক রয়েছেন। উইকিপিডিয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন ও সাংবাদিকতা চর্চা করতে গিয়ে ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩২ জন সাংবাদিকে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচার হওয়ার নজির খুব কমই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাংবাদিক হত্যার বিচার ঝুলে যাচ্ছে দীর্ঘসূত্রতায়। দেশের সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের অন্যতম বড়ো উদাহরণ হলো সাগর-রুনি হত্যাকা-, যার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি। সম্প্রতি গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন সংবাদকর্মী। কাকরাইল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন ও বিজয়নগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তারা আক্রান্ত হন। সাংবাদিকের ওপর এ ধরনের হামলা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের উপরে হামলার ঘটনার প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী যা জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা সংকুচিত করে তোলে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক-২০২৩ এর এক সূচক থেকে দেখা যায়, গত দুই বছরে বাংলাদেশ গণমাধ্যম সূচকে ১১ ধাপ ও ১৪ বছরে ৪২ ধাপ নিচে নেমেছে। যা কিনা দেশের সাংবাদিকতার ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই কর্তৃপক্ষকে এখনি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। হত্যা ও নির্যাতনের অগুনতি মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে, বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। বিচার না করায় দেশে এখন সাংবাদিক নির্যাতন নিত্যকার বিষয় হয়ে উঠেছে। তাই প্রথমত সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের স্থায়ী বিচারিক সমাধান করতে হবে। নতুবা এমন হামলা চলতে থাকবে। রাজনৈতিক দল আন্দোলন করবে এটা স্বাভাবিক, গণমাধ্যম সেখানে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। তাই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি সাংবাদিকদের উপর এই হামলা-হত্যা-নির্যাতন সাংবাদিকতা পেশাকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং তথ্য প্রকাশে বাধা দেয়ার মধ্য দিয়ে তা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই এখনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।