দেশে বর্তমানে আর্সেনিক দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর্সেনিকের বিষক্রিয়া বাংলাদেশে এখন প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গভীর নলকূপের পানিও এখন নিরাপদ নয়, আর্সেনিক ও লবণাক্ততার কারণে ব্যবহার করাও দুষ্কর। পাহাড়ে সুপেয় পানির উৎস সীমিত। পাহাড়ি ছড়া শুকিয়ে যাচ্ছে। উজানে বাঁধ দেওয়ার কারণে নদণ্ডনদীর পানিও কমছে। সুপেয় পানি ও সেচের জন্য অত্যধিক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও নিরাপদ পানি মিলছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার। এর মধ্যে ৫৯ ভাগ অর্থাৎ ৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ২২০ জন মানুষ সুপেয় পানি সুবিধার আওতায় এসেছে। আর সুপেয় পানি সুবিধার বাইরে রয়েছে ৪১ ভাগ অর্থাৎ ৬ কোটি ৭৭ লাখ ১৪ হাজার ৭৮০ জন মানুষ। এখনো দেশের ১০ ভাগ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সুপেয় পানি প্রাপ্যতার বিবেচনায় ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চর এলাকা, বন্যাপ্রবণ এলাকা, উপকূলীয় এলাকা, হাওর এলাকা, বরেন্দ্র অঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকা। দেশের এই ছয় শ্রেণির এলাকা বিস্তৃত রয়েছে ১০০টি উপজেলায়। দেশের ১৫৯ সিটি ও পৌরসভায় সরবরাহ করা পানির মানও একই। ওইসব এলাকায় ১৬৮টি পানি শোধনাগার, ১ হাজার ৫০০টি গভীর নলকূপে ১৫ হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সরকার চালু রেখেছে। গ্রাম পর্যায়ের ২০ লাখ টিউবওয়েলের পানি নিরাপদ হওয়ার কথা ছিল। তবে আর্সেনিক ও মাত্রাতিরিক্ত আয়রন সে পানিও জনজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। আর্সেনিক পরিস্থিতি, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং তাদের চিকিৎসার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ডিপিএইচইর কার্যক্রমে বড় ঘাটতি রয়েছে। সরকার বিশেষ নজর না দিলে দেশে আর্সেনিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। তাই দেশে যেসব অঞ্চলের মানুষ আর্সেনিকের ঝুঁকিতে আছেন সেসব অঞ্চল অতি দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। ওই অঞ্চলের পানিকে কী করে আর্সেনিকের দূষণমুক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সরকারকে আর্সেনিক উপদ্রুত এলাকায় সাধারণ মানুষের জন্য জরুরিভিত্তিতে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার আরও জোরদার প্রচেষ্টা চালাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।