সারাবিশে^ উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল ডুবে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলেও তার প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ ও তীব্রতা দুটিই বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছে খরাপ্রবণতা। বদলে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের ধরন। ফলে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়ছে। এই অবস্থায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা পরিস্থিতি দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে এরইমধ্যে অনেক গবেষণা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ বা প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে নেমে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিয়ে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি শিশু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের পরিবারগুলো ক্রমবর্ধমান হারে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিশুরা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০১০ অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরে বাংলাদেশে কেবল সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা এই সময়ের উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে বাংলাদেশে সম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকার, যা মোট জিডিপির ১.৩২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকৃত ক্ষতি এর চেয়েও অনেক বেশি। শুধু সম্পদের ক্ষতি নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরার মতো পানি ও কীটপতঙ্গ বাহিত রোগগুলো আবারও মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। বেড়ে যাবে অন্যান্য অসুস্থতাও। মানুষের কর্মক্ষমতাও হ্রাস পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই বেশি করে লক্ষ করা যাচ্ছে। এই প্রভাব মোকাবেলায় বা এসবের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের আরো ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এসংক্রান্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।