বর্তমানে খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংক খাত এবং অর্থনীতির জন্য মারাত্মক এক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবার পুনঃ তফসিলের সুযোগসহ নানা ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোও মন্দ ঋণের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। দেশে গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ প্রায় সাত গুণ বেড়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ ঋণের ১০.১১ শতাংশই এখন খেলাপি। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০০৯ সালে দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল গত মে মাসে জানিয়েছিল বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ আরও বেশি, প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার মতো।
বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা ব্যাংকিং খাতের অবনতির মূল কারণ হিসেবে খেলাপি ঋণকেই চিহ্নিত করছেন অর্থনীতিবিদরা, যা দেশটির অর্থনীতিকে স্তব্ধ করে একপ্রকার দেউলিয়া দশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে তারা জানান। ২০২৩ সালের সমঝোতা স্মারকের আওতায় ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল, সেগুলো অর্জন তো দূরের কথা, ধারেকাছেও যেতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। উলটো তাদের খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। শীর্ষ খেলাপিসহ অন্য খেলাপিদের কাছ থেকে নগদ আদায়ও সন্তোষজনক নয়। বরং এসব সমস্যার মূলে রয়েছে দুর্নীতি। ফলে কাজেই দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা সাধারণভাবে অত্যন্ত ক্ষমতাবান। তাদের বিরুদ্ধে যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই দেউলিয়া আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এবং ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত না করা গেলে খেলাপি ঋণের দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। ফলে কাজেই ব্যাংক কর্মকর্তারা যাতে কোনোভাবেই দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ আদায়ে প্রয়োজনে আইন আরও কঠোর করতে হবে, যেখানে ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বর্জনের বিধান থাকবে। তবেই ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিতর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব।