ফারসি উপসর্গ ‘বে’ আবার ফারসি শব্দ ‘কার’ যুক্ত হয়ে ‘বেকার’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। ‘বে’ অর্থ হীন আর কার অর্থ কর্ম, অর্থাৎ বেকার অর্থ কর্মহীন। অর্থনীতির পরিভাষায় সেই বেকার, যে কাজ করার যোগ্যতা ও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগ পায় না। দেশের সাক্ষরতার হার বাড়ছে যা এখন প্রায় ৭৫ শতাংশ। এটা অবশ্য গর্বের বিষয়। কিন্তু সেই সাথে উদ্বেগজনক হারে বেকারত্বের হারও বাড়ছে। এই ছোট্ট স্বাধীন দেশের কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল এই বেকারত্ব। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ তরুণ। এদেশে কর্মসংস্থানে তরুণদের ভূমিকা অসামান্য। কিন্তু তাও ক্রমেই বেড়ে চলছে বেকারদের সংখ্যা। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ১০ বছর আগে এদেশে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বেকার ছিল। কিন্তু বর্তমান দ্বিগুণ হয়ে বেকার জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখে। এক গবেষণায় দেখা যায় দেশের শিক্ষিত জনসংখ্যার অন্তত ৭০% লোকের কোনো প্রত্যাশিত পেশা বা বৃত্তি নেই। এই অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে, এই সমস্যাটি এতটাই প্রকট যে আমাদের দেশ এশিয়া মহাদেশে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দেশে বেকারত্ব সমস্যার প্রধান কারণ জনসংখ্যা সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিয়োগকর্তা বা শিল্পের অভাব। এই বেকারত্ব প্রতিটি দেশের জন্য অভিশাপ। সে দেশ যদি হয় উন্নয়নশীল এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ। দেশের বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত বেকার বেশি। দেখা যায় দীর্ঘায়িত বেকারত্ব একজন বেকারের ভিতর হতাশার সৃষ্টি করে। আর এই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে। এমনকি অসামাজিক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে অনেকে। ফলে সমাজে বেড়ে যায় অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা। এখনই সময় বেকারত্ব কমাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার। এদেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাব রয়েছে। তাই প্রথমত কর্মমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অবশ্যই চাকরির অবস্থার উপর ভিত্তি করে ভর্তির প্রস্তাব দিতে হবে। কার্যকরী শিক্ষা প্রদান করতে হবে। সরকারের উচিত তরুণদের উন্নয়ন দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। দেশে শিল্প ও কলকারখানা স্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। দক্ষ ও অদক্ষ যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে হবে। তরুণদের চাকরির মানসিকতা পরিহার করে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। লাখ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে তাদের চাকরি থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্স পাঠায়। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে আরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা বেকারত্ব। যুবসমাজকে বেকারত্বের অভিশাপ ও অপবাদ থেকে মুক্ত করতে এবং বেকারত্বের ভারী বোঝা জনগণের কাঁধ থেকে তুলতে হলে জনগণের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে যেতে হবে। তা হলেই সমস্যার সমাধান হবে।