প্রধানমন্ত্রী নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু দেখা গেলো তার উল্টো চিত্র। বছরের শুরুতেই চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম ফের বাড়ছে। যদিও প্রতিবছরই দেখা যায়, রোজার মাসের আগে আগে বাজার অস্থির হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেট দাম বাড়ানোর জন্য নানা অপতৎপরতা শুরু করে দেয়। পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে এখনো দুই মাস বাকি। যে মাহে রমজান কৃচ্ছ্রসাধনের মাস। এ মাসে মুনাফাখোরি মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য নয়; কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি বছর রমজানকে কেন্দ্র করে মুনাফাখোররা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ বছরও ঠিক তাই। গত কয়েক দিনে চাল, আটা, ময়দা, মাংসসহ বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। নির্বাচনের পর হঠাৎ গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা হওয়া স্বাভাবিক নয়। যে মাংস গত কয়েক মাসে ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। গরুর মাংসের দাম বাড়লে মুরগি, খাসির মাংস ও মাছের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ দাম আরও বাড়বে। চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চার-পাঁচ টাকা বেড়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এ ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের, আড়তদারেরা মিলমালিকদের দোহাই দিচ্ছেন। এতে করে আর বুঝতে বাকি থাকেনা আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতির পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক ও রেগুলেটরি ব্যর্থতা রয়েছে। এবং বাজারে অনেক ধরনের খেলোয়াড় থাকে যারা মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেখা যায়, কম দামে আমদানি করলেও আগের বর্ধিত দাম রেখে দিচ্ছে। এতে দ্রব্যমূল্য কমছে না। আমাদের দেশে এত শাকসবজি বা কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন হচ্ছে তাতে তো সংকট হওয়ার কথা নয়। সাধারণত, বাজারে দাম নির্ধারিত হয় সরবরাহ ও চাহিদার ভিত্তিতে। বাজারে সরবরাহের ঘাটতি নেই, তাহলে হঠাৎ করে দাম উল্লম্ফন করার কথা ছিল না। অথচ কয়েকদিন পরপর আমরা এমন দৃশ্যই দেখছি। কখনো কাঁচামরিচ, কখনো-বা আলু, ডিম, পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বাজারে যে কারসাজি হচ্ছে তা এ বাজার ব্যবস্থাপনারই দুর্বলতা। ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছিল। তবে নতুন বছরের শুরুতেই চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম ফের বাড়তে থাকে। আমারা দেখেছি ২০২৩ সালের পুরোটা সময়ই সীমিত আয়ের মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে অতিষ্ঠ ছিলো। এ অবস্থায় নতুন করে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে আরও নাজুক অবস্থানে চলে যাবে। তাই রমযানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন অভিভাবকের কাজ হবে সেই অদৃশ্য সিন্ডিকেটকে দৃশ্যমান করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করা এবং পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখা।