মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় বকেয়া বিল আদায় ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে তিনটি ইউনিয়নে গত ১০ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে মেঘনা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এতে করে ওই ইউনিয়ন গুলোর শতশত বৈধ গ্রাহকও গ্যাস না পাওয়ায় পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে উপজেলার বাউশিয়া, ভবেরচর, বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের প্রায় সব কটি গ্রামের গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।এ নিয়ে ভোগান্তিতে আছন এ ইউনিয়ন গুলোর বাসিন্দারা। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া গ্যাসের সংযোগ সচল করার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কয়েক হাজার এলাকাবাসী। সে সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ইটপাটকেল, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপে অন্তত ১২ জনের আহত হয়। বুধবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,ঘরের বাহিরে মাটির চুলায় রান্নাবান্নার কাজ সারছেন গৃহিনীরা।গ্যাসের চুলায় অভ্যস্ত নারীরা রান্নাবান্নার কাজ মাটির চুলায় করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের আক্ষে প্রকাশ করতে থাকেন। নয়াকান্দি গ্রামের আয়েশা সিদ্দিকা বলেন,১২বছর আগে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ করে আমরা তিতাস গ্যাসের সংযোগ নিয়েছিলাম। তখন থেকেই প্রতিমাসে নিয়মিত গ্যাসের বিল পরিশোধ করে যাচ্ছি। ১০ দিন আগে তিতাস কোম্পানি বিনা নোটিসে আমাদের গ্যাস বন্ধ করে দেয়।পরে খবর নিয়ে জানলাম যারা অবৈধ গ্রাহক আছেন তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেই তারা এমন ধরনের কাজ করেছে। এসময় আয়েশা সিদ্দিকা আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, যারা অবৈধ গ্যাস চালাচ্ছে তিতাস গ্যাস তাদের খুঁজে বের করে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুক। আমরা যারা বৈধ গ্রাহক আছি। নিয়মিত বিল দিচ্ছি আমাদের টা কেন বন্ধ করা হলো! এমন আক্ষেপ এ গ্রামের আকলিমা বেগম,সেতু ,রহিমা ,রেহানা বেগম,জেমি আক্তার,লক্ষীরানীদের। গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় একইভাবে বিপাকে আছেন বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের তেতৈইতলা এলাকার বাসিন্দারা। এ এলাকার বাসিন্দা মোমেনা বেগম বলেন,অবৈধ গ্রাহকদের শাস্তি দিতে গিয়ে আমাদের বৈধ গ্রাহকদের বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। যে দিন গ্যাস বন্ধ করা হয় সেদিন রান্না-বান্না ও খাওয়া দাওয়া নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।ভেবেছিলাম দু একদিনের মধ্যে পুনরায় গ্যাস পাবো। ১০ দিন পার হচ্ছে গ্যাস দিচ্ছেনা। এখন যাদের সামর্থ আছে তারা সিলিন্ডার গ্যাস কিনে ব্যবহার করছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষদের লাকরির চুলার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিসহ বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান,গ্যাস বিচ্ছিন্ন এলাকা গুলোতে শত শত বৈধ গ্রাহক বিরম্বনায় আছে। কয়েক বছর আগে তিতাস কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় কয়েকজন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বহু মানুষকে বৈধ বলে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেন। কয়েক দিন আগে সেসব সংযোগ অবৈধ বলে চিহ্নিত করে তিতাস। সেসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বৈধ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সংযোগ ফিরে পেতে আন্দোলন করা হয়েছে। সেখাখানে পুলিশ বাঁধা দিল।আমার প্রতিবাদ করেছি।পুলিশ গুলি করছে,কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।আমরাও ইটের গুড়া ছুড়েছি।তারা আহত হওয়ার নাটক করে মামলা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় স্থানীয়রা দাবি করেন,অবৈধ গ্রাহকদের চিহ্নিত করা হওক,কারা এসব সংযোগ দিয়েছে তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হওক।সাধারণ মানুষদের কোন বিরম্বনায় না ফেলে, বৈধ সংযোগ দ্রুত চালু করা হওক। নয়াকান্দি গ্রামের বাবুল দেওয়ান ২০১৪ সালে তাদের চার জন প্রতিবেশির চারটি সংযোগের জন্য আব্দুর রশিদ নামে বনফুল কোম্পানির এক ব্যক্তির কাছে ৪৮ হাজার টাকা জমা দেন। আব্দুর রশিদ সে সময় রাইজার ছাড়াই শুধু পাইপের মাধ্যমে গ্যাসের লাইন টেনে দেন। গ্যাসের বিল প্রদানের জন্য কোন বই দেয়নি। এর পর থেকে অবৈধভাবে চলছিল চারটি সংযোগ। বাবুল দেওয়ান বলেন, আমরা তো বৈধ লাইনের জন্য টাকা জমা দিয়েছিলাম। তবে রশিদ নামের ওই ব্যক্তি গ্যাস অফিসে টাকা জমা না দিয়ে তিনি তাঁর খেয়ে ফেলেছেন। এখানে আমাদের দোষ কোথায়?আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা।তার মুঠোফোনও বন্ধ। সেম এলাকা ছেড়ে সে আমাদের ফোন ধরছেনা বৈধ-অবৈধ সবারই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন,যাদের অবৈধ বলা হচ্ছে,তাদের বিধি মেনে বৈধতা দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কেন করা হলো, এসব বিষয়ে জানতে মেঘনা তিতাস গ্যাস কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান পলাশের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন, উপজেলায় ১৪ হাজারের মত গ্যাস সংযোগ আছে।যার অধিকাংশই অবৈধ।কেউ একটি সংযোগ নিয়ে একাধিক চুলা জালাচ্ছেন।কেউ অনেক বছর ধরে বকেয়া বিল পরিশোধ করছেন না।অনেকেই অবৈধভাবে গ্যাসের লাইন টেনে আবাসিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করছেন।সবাইকে নিয়মের মধ্যে আনতে বৈধ-অবৈধ সবার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।খুব শীঘ্রই এটার সমাধান হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। সংযোগের বৈধতা এবং গ্যাংস সংযোগ সচলের বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কোহিনুর আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,যারা বৈধ ও অবৈধ গ্রাহক আছনে আমরা তাদের দুপক্ষের দাবির কথা শুনেছি। এসব দাবির বিষয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।