বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ প্রতিবন্ধী মানুষ। শুধু সমাজ বা রাষ্ট্র থেকেই নয়, এমনকি পরিবার থেকেও প্রায়শই বঞ্চনা আর নেতিবাচক আচরণের শিকার হন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর দেশে-দেশে প্রতিবন্ধীদের রয়েছে নানা বঞ্চনা আর বৈষম্যের অভিজ্ঞতা। সমাজে প্রতিবন্ধীরা নানাভাবে অবহেলার শিকার হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশুরা ব্যাপক বৈষম্য ও কুসংস্কারের শিকার হয়। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ বা কর্মক্ষেত্রের বৈষম্যই মূল। সমাজের অনেকের ধারণা প্রতিবন্ধীত্ব একটি অভিশাপ বা এটি একটি পাপের শাস্তি স্বরূপ হয়েছে। ফলে সবাই তাদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখেন। মূলত যেসব শিশুর দৈহিক, মানসিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলো স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় কম হয় বা ভিন্ন হয় তাদের কে প্রতিবন্ধী বলা হয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশই প্রতিবন্ধী। অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকের বেশি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পায় না। বরং পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে। মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে। যেসব শিশু স্কুলে যাচ্ছে, বয়স অনুযায়ী অন্য শিশুদের তুলনায় তারা শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। আবার দেখা যায় স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সুযোগ-সুবিধার অনেক অভাব আছে। যেমন শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ লাগে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুর জন্য ব্রেইল লাগে। স্কুলে এগুলোর অভাব আছে। আবার অনেক স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশু নিতে চাইলেও অন্য অভিভাবকরা নানারকম চাপ তৈরি করেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে ২০১৩ সালে একটি আইন করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩-তে সকল প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তির অন্য নাগরিকের মতো সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আমারা যদি এখনি এই শিশুদের সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে না পারি তাহলে দেশের ভবিষ্যতের জন্য তা হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নে সরকারকে এখনি এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়, তা বলতে গেলে অনেক নগণ্য। ফলে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গড়ে উঠে ভিক্ষাবৃত্তি। কাজেই যে ভাতা তাদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে তার পরিমাণ আরও বেশি বাড়াতে হবে। সর্বোপরি প্রতিবন্ধী শিশুদের যদি আমরা সঠিকভাবে, উপযুক্ত সময়ে পরিচর্যা করতে পারি তাহলে তারা সমাজের বা দেশের বোঝা হবে না বরং সম্পদ হবে।