হেপাটাইটিস একটি ভয়ানক ব্যাধি। সাধারণ কথায় লিভার তথা যকৃতের প্রদাহকে বলা হয় হেপাটাইটিস। কোনো ব্যক্তির হেপাটাইটিস হওয়ার অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। তবে এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো-বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস। এ ধরনের ভাইরাস সরাসরি যকৃতকে সংক্রমিত করে এবং যকৃতেই বংশবৃদ্ধি করে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই, জি ইত্যাদি হলো বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস; যা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিসের অন্যতম কারণ। দেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। প্রতি বছর প্রায় ২২ হাজার রোগী মারা যায়। হেপাটাইটিস সংক্রমণ ক্রমে করোনা মহামারির মতো প্রকট হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চঝুঁকিতে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রথমে রয়েছে চীন এবং দ্বিতীয় ভারত। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বে ২৯ দশমিক ৬ কোটি মানুষ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি এবং ৫ দশমিক ৮ কোটি মানুষ ক্রনিক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের মধ্যম সংক্রমণ হার ২০১১ সালে ছিল ৬ দশমিক ৫। ২০২১ সালে কমে হয়েছে ৪ শতাংশ। স্বল্প সুবিধাসম্পন্ন দেশগুলোয় উচ্চ হারের প্রবণতা চলতে থাকলে এর জটিলতা আরও বাড়বে। লিভার সিরোসিসের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ এবং লিভার ক্যানসারের শতকরা ৮০ ভাগ হয়ে থাকে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস সংক্রমণের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষ এবং প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন হেপাটাইটি বি ও সি-এই দুই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। তবে এই দুটি প্রাণঘাতী ভাইরাস হলেও প্রতিরোধযোগ্য। করমর্দন, কোলাকুলি, জামাকাপড়, থালাবাসন-চামচ ইত্যাদির মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়ায় না। যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাঁদের জীবদ্দশায় ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ লিভার সিরোসিস, লিভার ফেইলিওর বা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারÍদুটিই প্রাণঘাতী রোগ। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো মাদকাসক্ত ব্যক্তি, সমকামী, অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্কে আসক্ত ব্যক্তি। আবার যারা হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস বহনকারী মায়ের নবজাতক, যারা চিকিৎসাসেবা-কর্মী, যারা রক্ত গ্রহণকারী, যারা ডায়ালাইসিস গ্রহণকারী, তাঁদের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে রোগের তথ্য গোপন বা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামালের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দাম কমানো জরুরি।