'সমৃদ্ধ অর্থনীতি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ফিসারিজ' স্লোগানে খুলনায় চিংড়ি মাছ নিলাম কেন্দ্র থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা পর্যন্ত ই-ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম বাস্তবায়ন বিষয়ক ইনসেপশন কর্মশালা সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) নগরীর শ্রীম্প টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ফিশারী প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এফপি-বিপিসি) ও ফিস ফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ফোয়াব)-এর অর্থায়নে এবং মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগ ও আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহযোগিতায় ফিস ফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ফোয়াব) এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও বিপিসি'র পরিচালক ড. রাজ্জাকুল ইসলাম, মৎস্য বিভাগ খুলনার উপ পরিচালক বিপুল কুমার বসাক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান, যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুল মামুন, মৎস্য পরিদর্শন ও মান-নিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো: আবুল হাসান, আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ)সহ-সভাপতি শেখ কামরুল আলম।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব ও স্বাগত বক্তৃতা করেন ফিস ফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ফোয়াব)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন। কর্মশালায় মুল পেপার প্রেজেন্টেশন করেন ফোয়াবের প্রকল্প ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মোঃ মনিরুজ্জামান মনির ও ফোয়াবের আইসিটি বিশেষজ্ঞ মাহমুদ-উর-রহমান রহমান। পাইলটিং কার্যক্রমের উপর সূচনা বক্তৃতা করেন সাতক্ষীরার কালিগন্জ আন্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। সঞ্চালনা করেন আরিফা ইসলাম খুকুমনি।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় সহকারী পরিচালক দিনারা জামান, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান,
খুলনা চিংড়ি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ অহিদুজ্জামান মঞ্জিল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ফিশারী প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের (এফপি-বিপিসি) সহকারী পরিচালক পলাশ কুমার ঘোষ, ফোয়ারের খুলনা জেলা আঞ্চলিক কমিটির আহবাহক জসিম উদ্দিন খাজা, সদস্য সচিব মোঃ আলী হোসেন, আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের খুলনা এরিয়া ম্যানেজার সজল কুমার সাহা, পুরস্কারপ্রাপ্ত মৎস্য চাষী শেখ শাকিল ও মো. শাহজাহান সিরাজ প্রমুখ।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন চাষি আ. সালাম বিশ্বাস, জিএম শহিদুল ইসলাম, আড়ৎদার শেখ আতিয়ার রহমান, সাংবাদিক জিয়াউস সাদাত, মুহাম্মাদ নূরুজ্জামান, এহতেশামুল হক শাওন, আস্থা ফিডের শাহরিয়ার ইসলাম, মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবিএম জাকারিয়া।
কর্মশালায় 'স্মার্ট ফিসারিজ'র জন্য চিংড়ি থেকে শুরু করে সব ধরণের মাছ নিলাম কেন্দ্র থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা পর্যন্ত ই-ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলা হয়, চিংড়ি সেক্টরে ই-ট্রেসেবিলিটি বাস্তবায়নের ফলে চিংড়ির গুণগত মান, নিরাপত্তা ও উৎস সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। যা আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থা বাড়ায়, রপ্তানি আয় স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং ভোক্তাদের কাছে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ চিংড়ি পৌঁছে দেওয়ার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যা সামগ্রিকভাবে এ খাতের শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আনে।
ই-ট্রেসেবিলিটি বাস্তবায়নের সুফল তুলে ধরে আরও বলা হয়, উন্নত দেশগুলোতে চিংড়ির উৎস ও গুণগত মান নিয়ে কঠোর নিয়ম রয়েছে। যা ই-ট্রেসেবিলিটির মাধ্যমে পূরণ করা যায়। ফলে রপ্তানি বাড়ে, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করে, গুণগত মান ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়, ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করে, বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ির সুনাম বৃদ্ধি পায়। ফলে রপ্তানি আয়ও বাড়ে। এছাড়া নিলাম কেন্দ্র বা হ্যাচারি থেকে শুরু করে খামার পর্যন্ত সকল স্তরে স্বচ্ছতা ও নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শৃঙ্খলা ফিরে আসে। ফলে যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে (যেমন: কোনো রোগ বা দূষণ) ই- ট্রেসেবিলিটির কারণে দ্রুত উৎস শনাক্ত করে সমাধান করা যায়। একই সঙ্গে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। যা পণ্যের বাজারমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সর্বপরি ই- ট্রেসেবিলিটি বাস্তবায়ন বাংলাদেশের চিংড়ি খাতকে একটি আধুনিক, নির্ভরযোগ্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক খাতে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় বিভিন্ন মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও ডিপো মালিক, চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী, চিংড়ি চাষী, সরবরাহকারী, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ফোয়াবের কার্যনির্বাহী সদস্য খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গোলাম কিবরিয়া রিপন দেশের শ্রেষ্ঠ চিংড়ি চাষী হিসেবে স্বর্ণ পদক পাওয়ায় তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।