গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডারপ্রক্রিয়া থেকে কাজ বাস্তবায়ন পর্যন্ত দুর্নীতির সঙ্গে ঠিকাদার আর কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির প্রতিবেদনে দুর্নীতির উৎস ও সমাধানের দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। গণপূর্তে দুর্নীতির ১০টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে দুদক। একই সঙ্গে এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ২০টি সুপারিশও তুলে ধরেছে সংস্থাটি। গত বুধবার সচিবালয়ে প্রতিবেদনটি গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে তুলে দেন দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন, অডিট রিপোর্ট, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক টিমের নিজস্ব মতামতের সমন্বয়ে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয় বলে জানা যায়।
সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় প্রাক্কলন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই নিবিড় মনিটরিংয়ের প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কারণ এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপকতা রয়েছে। এমনকী ইজিপি প্রক্রিয়ায়ও ঠিকাদার-কর্মকর্তার যোগসাজশের ঘটনা ঘটছে বলে জানা যায়। যেসব কর্মকর্তার নৈতিকতার বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে তাদের কোনো প্রকল্পেই নিয়োগ দেয়া ঠিক হবে না।
দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক দলটি তাদের অনুসন্ধানের সময় গণপূর্ত অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা এবং এ বিষয়ে যারা সম্যক ধারণা রাখেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে। সার্বিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক দলটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুর্নীতির উৎস ও ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে সুপারিশমালা প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিল করে।
সরকারী প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রচলিত প্রথায় পরিণত হয়েছে। কাজ পেতে হলে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি, পরামর্শক সংস্থা, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়াটা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুষ দেয়ার পরিনতিতে নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী, যেমনÑ ইট, রড, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আমাদের জানা মনে, সরকারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় টেন্ডারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় না। দুদকের অনুসন্ধানেও গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তার আত্মীয়-স্বজন বা তাদের নামে-বেনামেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকার তথ্য মিলেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে আমরা অত্যন্ত সৎ এবং ভালো মনের মানুষ হিসেবে জানি। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণের কথা বলছেন। মন্ত্রি যদি নিজের মান-মর্যাদা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নীতিকে শতভাগ ধারণ ও তা বাস্তবায়নে নিবেদিত থেকে তার মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারেন, তবেই ‘গণপূর্তে দুর্নীতির আখড়া’ বলে যে কালিমা লেপন হয়েছে তার দুর হওয়া সম্ভব। গণপূর্তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি বাস্তবায়ন করা মাননীয় মন্ত্রীর নৈতিক দায়িত্ব, পেশাগত দায়িত্ব। কারণ, তিনি জনগণের করের টাকা ভোট করছেন এ দায়িত্ব পালনের জন্যই। আমরা এ ব্যাপারে মন্ত্রীর তীক্ষè নজরদারী ও দুর্নীতি প্রতিরোধে তার আন্তরিকতা কামনা করছি।