মালিক-শ্রমিকদের চাপে সড়ক পরিবহন আইনে শিথিলতার পর এবার নৌচলাচল আইনের খসড়ায় কঠোর বিধান থেকে সরে এসেছে সরকার। ২০১৭ সালে তৈরি করা নৌদুর্ঘটনা আইনের খসড়া ২০১৮ সালে চূড়ান্ত করেছিল সংশ্লিষ্ট কমিটি, যাতে নৌযান দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে ১০ বছরের কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। কিন্তু নৌযান মালিক-শ্রমিক নেতাদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত সাজা কমিয়ে ৫ বছর কারাদ- বা ৩ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে নতুন খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নাবিক বা অন্য কারও অদক্ষতা, অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে কী ধরনের সাজা হবে তাও সরাসরি খসড়ায় রাখা হয়নি। এতে করে সড়কের মতো নৌপথেও শৃঙ্খলা ফেরানো থেকে সরকারের পিছু হটার ঘটনা ঘটল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রতি বছর দেশজুড়ে নৌযান দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, ফিটনেসহীন নৌযান চালানো এবং নানা ধরনের অনিয়মের কারণে। ফলে সবচেয়ে আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী ভ্রমণ মাধ্যমটিতে কখনও কখনও বড় ধরনের প্রাণ ও সম্পদহানি হয়ে থাকে।
প্রাণ ও সম্পদহানি কমানো এবং নৌপথে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্দেশ্যে তৈরি খসড়ায় সাজা ১০ বছরের জায়গায় ৫ বছরের প্রস্তাব করার অর্থ হল কিছুটা জরিমানা বাড়ানো এবং নতুন দু-একটি ধারা যুক্ত করা ছাড়া ১৯৭৬ সালের অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশই বহাল রাখা। আমরা মনে করি, এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনের বাস্তবায়ন বা কঠোর বিধান থেকে পিছু হটার অর্থ হল সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার চেয়ে সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থকে বড় করে দেখা, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সড়ক ও নৌপথসহ চলাচলের সব মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কঠোর আইন করা না গেলে সংশ্লিষ্ট খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল আইনের খসড়ায় কঠোর শাস্তির বিধান থেকে পিছু হটার বিষয়টি জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যাত্রীদের জীবন ও সম্পদকে নিরাপদ করার জন্য কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে কঠোর আইন পাস ও প্রয়োগের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সড়ক ও নৌপথে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটা দেশগুলোর একটি- এ বিবেচনায় শক্ত অবস্থান নেয়াই সময়ের দাবি।