গত বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল সরকার। এমনকি ৩০ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে চামড়া রপ্তানির সুযোগও তৈরি করে দেয়া হয়। যার মধ্যে আবার প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা পশম ছাড়ানো (ওয়েট ব্লু) চামড়াও পেয়েছে রপ্তানি সুবিধা। এমন কি ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে আগেভাগেই এ বছর চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে ধরে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়াও বড় চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক ঋণসহ নানা উপায়ে নগদ অর্থ সরবরাহ করে সরকার। মূলত এত সব সুবিধার সবই ছিল বড় চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য। কিন্তু তারপরও চামড়ার দামে গত বছরের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এত আয়োজনেও চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বরং সিন্ডিকেট করে অনেক কম দামে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেছে। এ কারণে অনেকেই চামড়া বিক্রি না করে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে, এমন সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে। আবার কেউ কেউ সরকার নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেক দামেও চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
বিশ্ববাজারে চামড়ার দরপতন ও দেশীয় শিল্পগুলোর সক্ষমতা কমে যাওয়া বিবেচনায় ঢাকার জন্য লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম গরুর প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ঢাকায় ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। অন্যদিকে, খাসির চামড়া সারাদেশে প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর খাসির চামড়া ১ থেকে ২০ টাকা ও বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর ধরেবাস্তব চিত্র ভিন্ন। কোনো ব্যবসায়ীই সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া না কিনে বিক্রেতাদের বাধ্য করেছে অর্ধেকেরও কম দামে তা বেচতে।
গণমাধ্যমে প্রকাশত খবর অনুযায়ী রাজধানীতে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে আকারভেদে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা। আর খাসির চামড়ার দাম ২-১০ টাকা। এমন চিত্র শুধু রাজধানীতে না, সারাদেশেরই। কোনোভাবেই দামের এই বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হয়নি সিন্ডিকেটের খেলায়। যাদের কাছে পুরো দেশ জিন্মি। আর দাম কমানোর এই খেলায় আড়তদার এবং ট্যানারি মালিকরা একে অন্যকে দোষ দিচ্ছেন। একপক্ষ বলছে, ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় চামড়া কেনার অর্থ সংকটে আছেন। আরেকপক্ষ বলছে, গত বছরের চামড়া অবিক্রিত থাকায় তারা বকেয়া শোধ করতে পারেনি। আর এই দুইপক্ষের মাঝে পড়ে নিঃশেষিত হচ্ছে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। আমাদের প্রশ্ন- তাহলে দাম নির্ধারণ করার মানে কি? বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম ঠিক করেও কেন তা বাস্তবায়ন করতে পারে না? আর বাস্তবায়নই যদি না করতে পারে; তাহলে দাম নির্ধারণ করে কেন? আর এই চামড়া সিন্ডিকেটের শক্তির উৎস কি? সরকারের চেয়েও কি তারা ক্ষমতাধর? নিয়ম-কানুনের ঊর্ধ্বে তারা? আমরা মনে করি, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ না নিলে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে প্রতি বছর। আর ঠকতে থাকবে চামড়ার প্রকৃত হকদাররা।