বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের ৫০টি শহরের মধ্যে শীর্ষ অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এতে ঢাকাবাসীর কর্মক্ষমতা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে। দেশের শহরগুলোর মধ্যে এ তালিকায় রয়েছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা, ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক বিশ্বের ৫০টি শহরের ওপর যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। গত সপ্তাহে গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ঢাকা সম্পর্কে বলা হয়েছে- অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বছরে এ শহরে মোটের ওপর ৫ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ (বিভিন্ন কাজে ঢাকার বাইরে থেকে আসাসহ) তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার চেয়ে কম কাজ করতে পারছেন। শুধু তা-ই নয়, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যাও বাড়ছে। স্বাধীনতার পর ঢাকার জনসংখ্যা ৩০ গুণ বেড়েছে। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য ঢাকা পরিণত হয়েছে ঘিঞ্জি নগরীতে। ফলে ঢাকার উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। রাজধানীর জলাশয়গুলোর বেশির ভাগ অস্তিত্ব হারিয়ে ঘনীভূত করছে পরিবেশগত সংকট। গাছপালা কেটে ফেলার অবিমৃশ্যকারিতায় ঢাকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। অপরপক্ষে ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি অন হিটওয়েভ ইন ঢাকা’ শীর্ষক আরেকটি গবেষণা করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেডক্রস ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই গবেষণায় ঢাকার ২৫টি এলাকাকে চরম উষ্ণ এলাকা বা ‘হিট আইল্যান্ড’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এলাকাগুলো হচ্ছেÑ বাড্ডা, গুলশান, কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর, গাবতলী, গোড়ান, বাসাবো, শহীদনগর, বাবুবাজার, পোস্তগোলা, জুরাইন, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, কুর্মিটোলা, উত্তরা, কামারপাড়া, মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং, আদাবর, ফার্মগেট, তেজকুনিপাড়া, নাখালপাড়া ও মহাখালী। আরো কিছু এলাকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। পরিস্থিতির এমন অবনতি ঠেকাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো শহরে ব্যবহৃত ভূমির ২৫ শতাংশ হতে হবে গাছপালাসমৃদ্ধ সবুজ এলাকা। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ থাকতে হবে জলাশয়। তা না হলে জনজীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বেই। ঢাকায় যত মানুষ বাড়ছে, তত কমছে সবুজ এলাকা ও জলাশয়। ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। বাড়ছে বহুতল ভবন, ঘরে ও গাড়িতে লাগানো এয়ারকন্ডিশনারসহ তাপ ছড়ানো যন্ত্রপাতির ব্যবহার। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন তো আছেই। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মতে, ঢাকায় যে পরিমাণ তাপমাত্রা বাড়ছে, তার ২০ শতাংশই বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে। ১৯৮৩ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৪০ লাখের কাছাকাছি। এখন তা সোয়া দুই কোটির বেশি। ভাসমান জনসংখ্যা হিসাবে নিলে এই সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি। এভাবে ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে এখানে স্বাস্থ্যসম্মত বসবাস নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এজন্য নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগী হতে হবে। নগর পরিকল্পনাবিদ, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ঢাকার বাসযোগ্যতার উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি এ অবস্থার অবসানে সরকার এবং নাগরিক সমাজকে সচেতন হতে হবে। বন্ধ করতে হবে আত্মঘাতী প্রবণতা।