ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিবাহিত ছাত্রীরা হলে থাকতে পারবেনা বলে গত মাসের শুরুতে যে বিতর্ক উঠেছিল, তা বাতিল করার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকোষ্ঠ স্ট্যান্ডিং কমিটি। বাংলাদেশের নারী ক্ষমাতায়নের শীর্ষে চলমান সময়ে নারীরা যখন অফিস-আদালত সহ বিমান-ট্রেন চালনা করছেন পুরুষদের পাশাপাশি তখন এমন আলোচনা নি:সন্দেহে বৈষম্যমূলক। শুধু তাই নয়, নারী শিক্ষার অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়া। দেশের আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু মাত্র রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ম আছে। অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটে অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকা না থাকা নিয়ে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মটি কাগজ-কলমে থাকলেও কখনো ব্যবহার করা হয়নি। তবে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেমা খাতুন ভাসানী হলের বিবাহিত আবাসিক ছাত্রীদের আসন ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেয়া হয় সম্প্রতি। যদিও তা গত ২০ ডিসেম্বর স্থগিত করা হয়।
প্রাচ্যের অস্কফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত ছাত্রীদের জন্যে আবাসিক হলে থাকতে না দেয়া সংক্রান্ত আলোচনাকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সচেতন সমাজ অমানবিক ও বৈষম্যমূলক মনে করছেন। আবাসিক হলে সিট সমস্যা সব সময় ছিল এবং এখনো আছে। এমন চলমান সমস্যার মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা তাদের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বছরে পর বছর সিট দখল করে রাখছেন। ফলে নতুনদের গণ রুমে ঠাই নিতে হয়। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক নতুন বিভাগ খুলেছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোযোগ দেয়নি। নতুন বিভাগ খোলার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় আবাসিক সমস্যা প্রকট হয়েছে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ ছিল ৪৭ টি। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ টিতে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩ হাজার থেকে বেড়ে ৩৭ হাজার হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত ছাত্রীরা আবাসিক হলে থাকতে পারবে না- এমন নীতি কাগজ-কলমে থাকলেও তা কখনো প্রয়োগ করা হয়নি। তবে এবার প্রয়োগ করতে গেলে ছাত্রীরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। বিভিন্ন হলের ছাত্রী প্রতিনিধিরা গত ১৩ ডিসেম্বর এ নিয়মকে অবমাননাকর ও বৈষম্যমুলক আখ্যা দিয়ে তা চিরতরে বাতিল করার দাবি জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জানের কাছে আবেদন করেন। ছাত্রী নেত্রীরা এর সাথে আরো তিনটি দাবি যুক্ত করেন। ১. শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় হলের নথিতে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে স্থানীয় অভিভাবকের পরিবর্তে জরুরি যোগাযোগ শব্দটি ব্যবহার করা। ২. হল প্রশাসনের যে কোনো ধরনের হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া। ৩. অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করা ও জরুরি প্রয়োজনে তাদের হলে অবস্থান করতে দেওয়া।
এপরিপেক্ষিতে উপাচার্য মহোদয় গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং ডাকেন এবং সর্বসম্মত ভাবে বিবাহিত ছাত্রীরা আবাসিক হলে থাকতে পারবেন না হলগুলোর আসন বন্টনের এ নিয়ম বাতিল করার পক্ষে মত দেন। সেই সাথে স্থানীয় অভিভাবকের পাশাপাশি ফরমে জরুরি যোগাযোগ শব্দটি রাখারও সুপারিশ করে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে সহ-উপচার্য প্রক্টর ও ১৮টি হলের প্রভোস্টদের উপস্থিতে গৃহীত সুপারিশগুলো চলতি মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।