পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভা নির্বাচনে আলোচিত চাঞ্চল্যকর যুবলীগ নেতা তাপস দাস হত্যা মামলার প্রধান আসামি নৌকা প্রতীক পাওয়ায় তৃনমূল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত (৩১ডিসেম্ভর) শুক্রবার রাতে গনভবনে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড বাউফল পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আলোচিত এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি জিয়াউল হক জুয়েলের নাম ঘোষনাকে কেন্দ্র করে এ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জানুয়ারী এ পৌরসভার ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০১২ সালে অনুষ্ঠিতব্য বাউফল পৌর নির্বাচনে স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন জুয়েল। ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামাতের সর্মথন নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। সূত্র জানায় ৮৯ সনে জুয়েল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রদলের শীর্ষ সন্ত্রাসী অভির সাথে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রদলের রাজনীতির ধস নামলে বিপদ কাটাতে এরশাদের সাথে আঁতাত করে অভিগ্রুপ। এরশাদ পতনের পরে অভির সাথে ক্যাম্পাস ছাড়েন জুয়েল। আত্মগোপন করে বাহিরের কলেজ থেকে বিএ পাশ করে ৯৩ সনে ঢাঃবিঃ প্রিলিমিনারীতে আইআরএ ভর্তি হন জুয়েল। এ সময় ছাত্রলীগের সোনালী দিনে ভোল্ট পাল্টিয়ে কোন পদপদবীতে না থাকলেও ছাত্রলীগ বনে যান জুয়েল। যুবলীগ নেতা তাপস হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি জিয়াউল হক জুয়েলকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় বিস্মিত ও হতবাক উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
পৌর আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক এনায়েত খাঁন সানা বলেন, ‘কেবল তাপস হত্যাই নয়, জুয়েলের সন্ত্রাসী বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, নাজিরপুর ইউনিয়নের জনপ্রীয় চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুকের উপর হামলা চালিয়ে তার বাম চোখ নষ্ট করে দেয়। এছাড়াও মেয়র জুয়েলের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য সাংবাদিক হারুন অর রশিদ খান, পৌর যুবলীগ সভাপতি মামুন খান, উপজেলা যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক সামসুল কবির নিশাতসহ অসংখ্য দলীয় নেতাকর্মীরা। সেই জুয়েল মনোনয়ন পাওয়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পান্নু বলেন, ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় বাউফল পৌর আওয়ামী লীগের এক বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের মনোনীত একক প্রার্থী নির্বাচিত হন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শহীদ ইব্রাহিম সেলিমের ভাই ইব্রাহিম ফারুক। তাকে বাদ দিয়ে বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী জিয়াউল হক জুয়েলকে মনোনয়ন দেওয়া দুঃখজনক। জুয়েলের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে তৃণমূলের প্রার্থী ইব্রাহিম ফারুককে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। নিহত তাপসের ভাই যুবলীগ নেতা পঙ্কজ দাস বলেন, ২০২০ সালে ২৪মে পৌর শহরে জেলাপরিষদ ডাকবাংলোর সামনে একটি তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে জিয়াউল হক জুয়েল ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করে। সেই খুনি জুয়েল কিভাবে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পায়! প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে জুয়েলের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি করেন নিহত তাপসের পরিবার। এ ঘটনায় জিয়াউল হক জুয়েলকে প্রধান আসামি করে ৩৫জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই পঙ্কজ দাস। এ বিষয়ে মুঠোফোনে জুয়েলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ২০১৬ সালে বাউফল পৌরসভাকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ‘গ’ শ্রেণীভুক্ত দেখিয়ে আগের সীমানায় তফসিল ঘোষনা করেছে। বিষয়টি নিয়ে পৌরবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।