সংশোধনাগারে বিভিন্ন অপরাধে আটক শিশু-কিশোরদের থেকে দুরে রাখতে সুনামগঞ্জে ৫০ টি মামলায় ৭০ শিশু-কিশোরকে ব্যাতিক্রমধর্মী এক রায় ঘোষনা করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক জাকির হোসেন। গত ২১ মার্চ তিনি অর্ধশত মামলা নিস্পত্তি করে প্রত্যেক শিশু-কিশোরকে এক বছরের সাজা দিয়েছেন। কিন্তু এ সাজা ভোগের জন্য তাদের কাউকে কারাগারে যেতে হবে না। তবে সংশোধনের নয়টি শর্তে নিজ বাড়িতে পারিবারিক পরিবেশে থেকে সাজা তামিল করবে প্রতিটি শিশু-কিশোর। রায়শেষে শিশু-কিশোররা আদালত থেকে জাতীয় পতাকা, ফুল, ডায়রি ও কলম হাতে বাড়ি ফেরে। আসামি শিশু কিশোরদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা গ্রামে মারামারি করেছে।
সাধারণত এমন রায় দেওয়ার কথা জানা যায় না। কিন্তু আইনের আলোকেই এমন রায় দিয়ে শিশু-কিশোরদের সুন্দর ভবিষ্যত তৈরী করা যায়, তা দেখিয়ে দিলেন বিচারক জাকির হোসেন। দ্যা প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৬০ অনুসারে তিনি একদিনে অর্ধশত মামলার রায় ঘোষণা করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শিশু- কিশোরদের কল্যানের কথা ভেবে স্বাধীনতার মাসে দেশের পতাকা তুলে দিয়ে অবশ্য পালনীয় শর্ত দিয়েছেন, নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন ভালো কাজ করতে হবে এবং তা ডায়রীতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। জানতে হবে মূক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, মানতে হবে মা-বাবা ও গুরুজনদের আদেশ নিষেধ। বাবা- মার সেবা-যতœ করতে হবে এবং তাদের কাজে কর্মে সাহায্য করতে হবে। নিয়মিত ধর্মের আদেশ নিষেধ মানতে হবে,পড়তে হবে ধর্মগ্রন্থ্। কমপক্ষে ২০টি গাছ লাগাতে হবে এবং পরিচর্যা করতে হবে। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে, মাদক থেকে দুরে থাকতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো অপরাধে জড়ানো যাবে না।
এসব শর্ত শিশু- কিশোররা ঠিক ভাবে পালন করছে কিনা তা মনিটরিং করবেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা। তার পাশাপাশি অভিভাবকদের দায়িত্ব রয়েছে শর্ত পালনে। তিন মাস পর পর আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রবেশনের মেয়াদ শেষ হলে আদালত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
বিচারক জাকির হোসেনের এটিই প্রথম ব্যতিক্রমধর্মী রায় নয়। এর আগে সুনামগঞ্জে তিন দফায় ৯৫টি মামলায় ১৩৩ জন শিশুকে প্রবেশনে দিয়ে সুস্থ স্বাভবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছেন। সবশেষে আরেক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিতে দেখা যায় এ বিচারককে। যৌতুকসহ পারিবারিক নানা ঝামেলা নিয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে আদলতে পৃথক মামলা করেছিলেন ৫০ নারী। বিচারক জাকির হোসেন দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে তাদের ভাঙ্গা সংসাস জোড়া লাগানোর উদ্যোগ নেন। ফলে নতুন করে তারা আবার সংসার শুরু করেন।
শারীরিক মানুসিক যন্ত্রনা দিয়ে মানুষকে সুপথে আনা কঠিন। তবে নীতি- নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা মঙ্গলজনক। তাই সারা দেশের বিচারকরা বিচারক জাকির হোসেনের ব্যতিক্রমী রায় দেখে উদ্বুদ্ধ হবেন এবং সামাজে শান্তি -শৃংখলা রক্ষায় অবদান রাখবেন।