করোনার ধীর গতির মধ্যে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সব শেষে গত ২৫ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একদিনে ভর্তির এ চিত্র সর্বোচ্চ। এর মধ্যে মারা গেছেন মাত্র একজন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো আট জন। এ বছর কক্সবাজার জেলায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের আর ঢাকায় মারা গেছেন তিন জন। চলমান বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু প্রকোপ বেড়ে গেছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগেই সর্তক করেছিল, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। এইজন্য দু’সিটির কর্পোরেশনকে ব্যবস্থা নিতে চিঠিও দিয়ে ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এজন্য সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নগরবাসীর ছাঁদ বাগানে পানি জমে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করছে কিনা তা ড্রন দিয়ে সনাক্ত করারও চেষ্টা চলছে। আবার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে এডিস মশার বিস্তার যাতে না হয় সেজন্য সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে লার্ভিসাইডিং এবং বিকেলে ফাগিংয়ের কাজ চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছ’ মাসে দশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯ জন। আর চলতি জুলাই মাসের ২৬ দিনে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২১৬ জন। এ বছর জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ জন, র্মাচ মাসে ২০ জন, এপ্রিল এ ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন এবং জুন মাসে ৭৩৭ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান এ চিত্র ডেঙ্গু বিস্তারেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত ২৫ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যে রোগী ভর্তি হয়েছে তাতে ৭৪ জনই ঢাকা মহানগরের। এর বাইরে ২২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের। এর মধ্যে ১৪ জন কক্সবাজার ও ৬জন চট্টগ্রাম জেলার। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এখন সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছেন২২৭ জন। অন্যান্য বিভাগে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭৪ জন। ১জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩০৫ জন। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে সাত জনই মারা গেছেন জুলাই মাসে। এর আগে জুন মাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুর আগ্রাসী রূপ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। এজন্য ঢাকার দু’সিটি কর্পোশনে দু’টি নিয়ন্ত্রণ তথ্য কেন্দ্র চালু করেছে। নগরবাসী ডেঙ্গু সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করতে পারেন।
বর্ষা মৌসুম শেষের দিকে হলেও জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশবৃদ্ধিও আশঙ্কা দূর হচ্ছে না। সেজন্য নগরবাসীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে ডেঙ্গু থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। সবাই যদি নিজ নিজ বাসা বাড়ি বা আশপাশের এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর না দেন, তবে পরিস্থিতি কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। এডিস মশা থেকে বাচতে নিজেদেরই সচেতন করতে হবে।