সোনালী ফসল উৎপাদনকারী বাংলাদেশের মাটি এখন অসুস্থ। মাটিতে রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ ক্রমেই কমে আসছে। দীর্ঘ-মেয়াদে এর বিরূপ প্রভাব খাদ্য উৎপাদনে পড়তে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটির যত্ন নেওয়া এখন সময়ের চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে ৫ ডিসেম্বর ‘মাটি: যেখান থেকে খাদ্যের যাত্রা শুরু ’ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হলো। মাটি বিজ্ঞানীরা বলছেন মাটির তিন ধরনের বৈশিষ্ট্যের কথা। আর এ তিন শ্রেণী হচ্ছে, ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক। মাটির রং, মাটি নরম বা শক্তই ভৌত চরিত্রের অংশ। বিভিন্ন ধরনের পদার্থ মাটির রাসায়নিক চরিত্র নির্বাচন করে থাকে। পক্ষান্তরে মাটিতে থাকে অতি ক্ষুদ্র অণুজীব থেকে ছোট ছোট পোকা ও কেঁচো জাতীয় প্রাণী। এদের উপস্থিতি মাটির জৈব চরিত্র ঠিক করে দেয়।
বাংলাদেশে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট বলছে, সারা দেশের মাটিতেই প্রয়োজনের তুলনায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সালফার, দস্তা ও বোরনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া অঞ্চল ভেদে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের ঘাটতি আছে বলে দেশের সব উপজেলার মাটি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ন’টি ইউনিয়নে ভৌত চরিত্র অনুযায়ী ন’ ধরনের মাটি (মৃত্তিকা দল) আছে। সব ধরনের মাটির রাসায়নিক গুনাগুণ পরীক্ষা করেছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট। আর তাতে দেখা গেছে, মাটিতে প্রয়োজনীয় রাসায়নিকের পরিমাণ কম।
একই ভাবে দেশের ৪৬০ টি উপজেলার মাটির গুনাগুণ বা রাসায়নিকের পরীক্ষায়ও একই ফলাফল পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট প্রতিটি উপজেলার ভূমি ও মাটি ব্যবহার নির্দেশিকা তৈরি করেছে। কোন জমিতে কোন ফসলের জন্য কোন সার কি পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে, তার পরামর্শ আছে নির্দেশিকায়। মাটি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু সে তুলনায় মাটি সংরক্ষণ বা মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন আর ফসলের উৎপাদন বাড়াতে যে ভাবে রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে ,তাতে মাটি অসুস্থ হয়ে উঠেছে। খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে মাটিকে সুস্থ করতে না পারলে জনজীবনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেবে। তাই আমরা মনে করি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট সারা দেশের উপজেলাগুলোর জন্য যে নির্দেশিকা তৈরি করেছে, তা অনুসরণ করে কৃষি উৎপাদনে মনযোগী হওয়া।
মাটি বাঁচলে ফসল উৎপাদন বাড়বে, ফসল উৎপাদন বাড়লে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়বে। সারের যৌক্তিক ব্যবহার, মাটির পুষ্টি উৎপাদনের ব্যবস্থাপনা ও মান চিত্রায়ন, শস্য বহুমুখীকরণ, মাটির পর্যাপ্ত অনুপুষ্টিকণা প্রয়োগ, দীঘ মেয়াদে টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনা কৌশল গ্রহণ এবং কৃষক পর্যায়ে কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বে যে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তাতে নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। তাই মাটিকে সুস্থ রাখা সবার দায়িত্ব। আর এ ব্যাপারে সবাই সচেতন হবেন।