ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। এ মাসে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পতাকা উড়েছিল বিশ্বদরবারে। হাসি আনন্দ আর গর্বে ভরা এ মাসেই রয়েছে দু’টি বিয়োগান্তক দিবস। এক জেলহত্যা দিবস ও দুই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতাকে জেলের ভেতর নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। আর ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের দু’দিন আগে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় তাদের দোসর আলবদর রাজাকার দেশকে মেধাহীন করতে এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এ ডিসেম্বরে জেলহত্যা দিবস নীরবে নিভৃতে বিদায় নিয়েছে। আসছে বুদ্ধিজীবী দিবস। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য: মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও তা নিয়ে তেমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে না। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা সমাবেশ নিয়ে এখন রাজধানীর রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলছে। আর বিএনপি চাইছে, নয়াপল্টনে তাদের অফিসের সামনে। উভয় পক্ষই অনড় অবস্থানে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাইছে না। অবশ্য বিএনপি ইতোমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাদে মতিঝিল এলাকায় বিকল্প স্থানের প্রস্তাব দিলে বিগত দু’দিন তিন দফা পুলিশ প্রশাসন ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে বৈঠক হলেও ফলপ্রসূ কোন সিদ্ধান্ত আসে নি। এদিকে সরকার ১০ ডিসেম্বর ঘিরে রাজধানী ঢাকাকে ‘অবরুদ্ধ ’ করার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, সেই মোতাবেক সরকার এগুচ্ছে। ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় কার্যত: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যাতে কয়েক স্তরের বাধা ভেদ করে বিএনপির পক্ষে বড় জমায়েত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজধানীতে প্রবেশ পথে পুলিশের তল্লাসি চৌকি বসানো হবে তিন দিন আগে থেকে। যাতে আশেপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে না পারে। অন্যদিকে বিএনপি তার সিদ্ধান্তে অনড়। তারা নয়া পল্টনেই সমাবেশ করবে। উভয় পক্ষই যুদ্ধংদেহী অবস্থানে। এতে রাজধানীবাসী আতংকিত। কি ঘটতে যাচ্ছে ১০ ডিসেম্বর ? বিগত দিনে দেখা গেছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা নয় সাধারণ পথচারীই মৃত্যু বরন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে। তবে কি ১০ ডিসেম্বর সরকার ও বিএনপি লাশ ফেলতে চায় আন্দোলন দমাতে বা আন্দোলন জোরদার করতে? আমরা কোনো প্রানহানি চাই না। সরকার যে জন-নিরাপত্তার কথা বলে অনড় আর বিএনপি তাদের সাংবিধানিক অধিকারে সভা সমাবেশ করতে চাইছে। তাতে জনআতঙ্ক কেন সৃষ্টি হবে? এর আগে বিএনপি চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে রাজশাহীতে অষ্টম বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করে এখন ঢাকায় সমাবেশ করতে চায়। তাদের প্রতিটি সমাবেশেই নানা ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবহন ধর্মঘট থেকে জনসমাগম ঠেকাতে চেষ্টা করেও সফল হয়নি। ঢাকার সমাবেশ কি হবে বলা যাচ্ছে না। আমরা উভয় পক্ষকেই বলবো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিন, জনআতঙ্ক দূর করুন। বিজয়ের মাসে আমরা আর রক্ত দেখতে চাই না।