বাংলাদেশের সড়ক পথচারীদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই বাসের ধাক্কায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। ঘটছে নির্দয় ও নিষ্ঠুর অনেক ঘটনা। এতে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ পথচারী, বাসের যাত্রী এবং কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশও। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জাতীয় জীবনে একটি বড় সমস্যা তার পরেও সড়কপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নেওয়া হচ্ছে না কোনো উদ্যোগ। সড়কপথে থামছে না মৃত্যুর মিছিল। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের কারও কাছে কাম্য নয়। তবুও প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। এদের মধ্যে আহত অনেকেই পঙ্গু জীবন বয়ে বেড়াচ্ছে। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি বাসের ধাক্কায় লোক মারা যাচ্ছে। তবে বাসচালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। কিন্তু এদের নিয়ন্ত্রণে নেই তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। ফলে দিনে দিনে ঢাকার বাসগুলো প্রাণঘাতী দানব হয়ে উঠছে। কিছুতেই বেপরোয়া বাসচালকদের রোধ করা যাচ্ছে না। শুধু সাধারণ পথচারী নয়, দায়িত্বরত অনেক ট্রাফিক পুলিশের প্রাণ ঝরছে এদের কারণে।
এক জরিপে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চালকের অসাবধানতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী, চলন্ত বাসে চালকের মুঠোফোন ব্যবহারের প্রবণতা। তা ছাড়া একজন চালকের অবৈধ লাইসেন্সের ব্যাপারও জড়িত। বেশির ভাগ চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই। এক প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে দেশের ৬১ শতাংশ চালক পরীক্ষা না দিয়ে লাইসেন্স পাঁচ্ছেন। আবার ১৬ লাখ চালকের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, শুধুমাত্র গত নভেম্বর মাসে সারা দেশে ৫৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪৩ জন নিহত এবং ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৬৪টি দুর্ঘটনায় ৫১ জন মারা গেছেন ও আহত হয়েছেন ৪ জন।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, নৌ পথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত, ১০ জন আহত এবং ৭ জন নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। সড়ক, রেল ও নৌ পথে সম্মিলিতভাবে ৬৬৮টি দুর্ঘটনায় ৭০৯ জন নিহত ও ৮৪০ জন আহত হয়েছে।
প্রাকৃতির দুর্যোগের ওপর মানুষের কোনো হাত না থাকলেও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ কমানো সম্ভব। এজন্য আমাদের সতর্কভাবে রাস্তা পারাপার হওয়া যেমন দরকার, তেমনি চালকদেরও সাবধানতা ও সর্তক হওয়া জরুরি। আমরা সাধারণ মানুষ, পথচারী কেউ পথের বলি হতে চাই না। এ ছাড়া সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার অভাবও বড় কারণ। ফুটওভারব্রিজ না থাকা, রাস্তার পাশে যেখানে সেখানে বাড়ি বানানো ও জনসমাগম হওয়া পথচারীর প্রাণহানির জন্য দায়ী। সরকার চাইলে নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়ে এগুলো মোকাবেলা করতে পারে।
দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, গণপরিবহন উন্নত করা, সড়ক-মহাসড়কে সড়ক বিভাজক নির্মাণ, বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়ানো অন্যতম। সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, একটি গড় হার পথচারী রাস্তায় প্রাণ হারাচ্ছেন। বিপরীতে চালক ও পথচারীদের সচেতন করে তুলতে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সতর্ক ব্যবস্থা নেই। ফলে আগামীতেও যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রাণ দেবেন, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। বাস্তবে পথচারীদের জন্য সড়ক একটি মৃত্যুফাঁদ হয়েই থাকছে। তাই সরকারের নিকট বিনীত আবেদন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমাতে হলে অবশ্যই দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। পরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতিবাচক উদ্যোগ এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে দৃষ্টি দিন। তাহলে হয়তো বেঁচে যেতে পারে হাজারো পথচারীর জীবন।