বায়ু মানুষের জীবনধারণের অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাতাস এখন জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের ঢাকা। পরিকল্পনাহীন নগরায়ণের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। এসব ভোগান্তির অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিনদিন বেড়েই চলছে। ক্রমাগতভাবে বিশ্বব্যাপী মৃত্যু এবং অক্ষমতার জন্য বায়ু দূষণ শীর্ষ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ শিশু সহ ৭০ লাখ মানুষ এর প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে থাকে। কম উন্নত দেশগুলোয় পাঁচ বছরের কম বয়সী ৯৮ শতাংশ শিশু দূষিত বায়ুর মধ্যে বেড়ে ওঠে। ফলে বিশ্বে শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ এখন বায়ুদূষণ।
জনস্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকর। ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস রয়েছে, ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো। দূষণের অন্যতম বড় উৎস হচ্ছে বর্জ্য। রাজধানীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় এটি মারাত্মক সমস্যারূপে চিহ্নিত হয়েছে। রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে শুরু করে পরিধেয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক, কাগজ, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্যও উৎপন্ন হচ্ছে। রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলো ময়লা আবর্জনায় উপচানো থাকে। সেখান থেকে জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। শহরের কল-কারখানাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল বলে অনেক প্রতিষ্ঠান এগুলো মুক্তভাবে শহরের খাল-বিল নদী-নালায় ফেলছে। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার কারণে হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ক্যান্সার হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে।
বায়ুদূষণ রোধসহ পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর ‘নির্মল বায়ু এবং টেকসই পরিবেশ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের পথে থাকলে শুধু এ প্রকল্প দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। যেসব সুনির্দিষ্ট কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে সরকারকে সেসব দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সনাতন পদ্ধতির ইটভাটাগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইটভাটায় রূপান্তর করা গেলে ৭০-৮০ শতাংশ দূষণ কমানো সম্ভব।
ঢাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দূষণ ঝুঁকিতে থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। এরমধ্যে কিছুদিন ধুলাবালি রোধে সিটি করপোরেশন পানি ছিটানোর কর্মসূচি নিলেও এখন তেমন একটা লক্ষণীয় নয়। তাই ঢাকাকে দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব শুধু সরকার কিংবা কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি-বিশেষের নয়, এ দায়িত্ব আমাদের সবার। তবে যারা অজ্ঞতাবশত রাজধানীর পরিবেশ দূষণে যুক্ত হচ্ছেন তাদের সচেতন করা প্রয়োজন, তেমনি সরকারের বায়ুদূষণ রোধে সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা ও এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিৎ। ঢাকার দূষণ রোধে তড়িৎগতিতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।