পানি একটি অমূল্য সম্পদ যা জীবজগতের প্রাণরক্ষাকারী উপাদান হিসেবে বিবেচিত। সাগর, নদীনালা, হ্রদ ইত্যাদির অন্যতম উৎস পানি। বর্তমানে প্রতিনিয়ত মানুষ এ পানিকে দূষিত করছে। পানি দূষণ হলো পানির উপাদানগত পরিবর্তন সাধন। যে কোনো কারণে পানির উপাদানগত পরিবর্তন ঘটলে তাকে পানি দূষণ বলে। পানি হচ্ছে জীবের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান। আবার দুষিত পানি জীবনশিকারী হয়ে ওঠে। কাজেই পানি দূষণ বলতে পানির গঠনগত এবং অবস্থানগত এমন পরিবর্তনকে বুঝায় যাতে পানি স্বাভাবিক অবস্থায় জীবজগৎ তথা মানুষের যেসব কাজে বা উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো সেসব কাজের জন্য অনুপযোগী বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। পানি দূষণ কোনো স্থান বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত। পানির সঙ্গে সবাই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। কিন্তু এটি যেহেতু আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় বিনামূল্যে পাঁচ্ছি, তাই এ নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। পানির অপর নাম জীবন এটি আমরা সবাই জানি। তবে বর্তমানে পানির সঙ্গে আরেকটি বিষয় যুক্ত হয়েছে, যা হলো সুপেয় পানি। আমাদের ব্যবহারের পানি অযোগ্য হয়ে পড়ছে দিনদিন। আমাদের মতো জনবহুল দেশের জন্য এটি অতি চিন্তার বিষয়। প্রাণীকুল রক্ষায় পানি দূষণমুক্ত রাখার কোনো বিকল্প নেই। ইদানীং শিল্পকারখানার উত্তপ্ত বর্জ্যপদার্থ পানিতে নির্গত হওয়ার ফলে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। ফলে পানির অক্সিজেন ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত আর্সেনিক পানিতে মিশে থাকে। এসব ক্ষতিকর উপাদান পানিকে দূষিত করছে। এ ছাড়াও মানুষ প্রত্যক্ষভাবে পানিতে গোসল ও বস্ত্রাদি ধৌত করার ফলে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশে পানির দূষণ বাড়ছে। অন্যদিকে পলিথিন, রাবার, প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি পণ্য যা সহজেই নষ্ট হয় না, তা পানিতে জমে দূষণের কারণ হচ্ছে। শহর ও বন্দরের পয়ঃপ্রণালির আবর্জনা ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নদী ও সাগরে পতিত হলে পানি দূষিত হয়ে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। পুকুর ও নদীতে এছাড়াও নালা নর্দমার পচা পানিতে গোসল, বাসনপত্র মাজা ও কাপড়চোপড় ধোয়ার ফলে মানুষের কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি মহামারি রোগ হয়ে থাকে। বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ মানবদেহের দৈহিক বিকৃতিসহ ক্যান্সার সৃষ্টি করে। সুস্থ দেহের পরিপূর্ণ জীবনের জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি। পানির সদ্ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ অতীব জরুরি। পানি দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাই এখনই সময় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার। তাই বিশেষজ্ঞদরে মতামতরে ভিত্তিতে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।