দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে ফিটনেসবিহীন গাড়ীর সংখ্যা। বিভিন্নভাবে অভিযান চালিয়েও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি এসব গাড়ীর চলাচল। রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন এবং এক রুটের পারমিট নিয়ে অন্য রুটে চলাচলকারী বাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত যৌথ অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে এসব বাসের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে। ভাড়ার তালিকা না থাকা, মেয়াদউত্তীর্ণ ট্যাক্স টোকেন, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর অপরাধে বাসচালকের বিরুদ্ধে এবং আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাসসহ অন্যান্য অপরাধে জরিমানা আদায় করা হয়। তারপরও বাড়ছে এসব গাড়ির সংখ্যা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের সংখ্যা কত এবং তার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা কত-এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই কারও কাছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দাবি, সারা দেশে তাদের নিবন্ধিত বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৬০টি। এরমধ্যে সাড়ে ৫ লাখের বেশি গাড়ি ফিটনেসবিহীন বলে জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে। ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে ফিটনেসবিহীন মোটরযান ধ্বংস বা চিরতরে ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বিআরটিএ। এসব মোটরযানের নিবন্ধন বাতিলের কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। ২০১২ সালের এপ্রিলে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা কমিটির সভায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৩ সালের জুনে কমিটির সভায় তিন মাসের মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ি অপসারণের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এসব কেবল ঘোষণাতেই আটকে আছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অন্যান্য কারণের মধ্যে ছিল ৬৬ হাজার ৬৬১টি অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) গাড়ি। এখনও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এটি। দুর্ঘটনা ঘটলেই বলা হয় গাড়ির ফিটনেস ছিল না। চালকের লাইসেন্স ছিল না। কিন্তু ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধে সড়ক পরিবহন আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। একটি অসাধু চক্রের কারণে আইনের এমনটি হচ্ছে, যাতে যত নৈরাজ্য থাকবে, তত চাঁদাবাজি করা যায়। এসব কারণে অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা ঘটছে, যা প্রাণহানি না বলে হত্যাকাণ্ড বলা উচিত। যানবাহনের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগটা যথাযথভাবে করতে হবে বিআরটিএকে। অন্যথায় আনফিট বা ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনাও বাড়বে। এজন্য বিআরটিএ-কে অভিযান আরও জোরদার করতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হবে। মৃত্যুর মিছিল থামাতে এর বিকল্প নেই।