উন্নয়নের ভুল দর্শন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়নে অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন জমির পরিমাণ কমছে। কৃষিজমির মাটি চলে যাচ্ছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটের ভাটায়। আর জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছেই, নদী-খাল দূষণে ও দখলে বিপর্যস্ত। সেগুলো হয়ে পড়ছে মাছশূন্য। অনেক মাছ বিলুপ্তও হয়ে গেছে। দখল ও দূষণে ঢাকা এবং এর চারপাশে থাকা নদী ও খালগুলো মরতে বসেছে। বুড়িগঙ্গায় মাত্রাতিরিক্ত দূষণ কমাতে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারের হেমায়েতপুরে সরিয়ে নেওয়া হয় ২০১৭ সালের এপ্রিলে। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিশিল্প সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হলেও, তা এখন ধলেশ্বরী ও বংশী নদীসহ আশপাশের এলাকার জন্য বিপর্যয়কর হয়ে উঠেছে। সারা দেশে প্রায় ২০০০টি শিল্প কল-কারখানা আছে। অর্ধেকের বেশি ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন করেনি বা সব সময় চালু রাখে না। ফলে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু, হালদা, কর্ণফুলী, সুরমা, রূপসা কিংবা ব্রহ্মপুত্র কোনো নদণ্ডনদীয় রেহাই পাঁচ্ছে না এ দূষণের হাত থেকে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বুড়িগঙ্গা নদীর ৪৩টি জায়গায় পাওয়া গেছে ১১ হাজার ৫৬৪ টন বর্জ্য। শীতলক্ষ্যার ৪৩ জায়গায় ৪৩ হাজার ১৮৩ টন, বালু নদের সাত জায়গায় দুই হাজার ১২ টন এবং তুরাগের ৩৬ জায়গায় ১৫ হাজার ৭৭১ টন বর্জ্য পাওয়া গেছে। এসব নদীতে দৈনিক ১১২ টন বর্জ্য ফেলা হয়। এইসব বর্জ্যর বেশির ভাগ আসে ট্যানারি ও ডাইয়িং শিল্প থেকে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানা থেকে ফেলা এইসব বিষাক্ত বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে। ওই দূষিত পানি মেঘনায় মিশছে যা পরবর্তীতে সারা দেশের নদীগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। বেশির ভাগ নদী, খাল ও জলাশয়ের তলদেশে প্লাস্টিকবর্জ্যরে আস্তরণ তৈরি হয়েছে। এর ফলে পানি ঠিকমতো ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে না। ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে যার ফলে দেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পের অসংখ্য তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি দূষণ ও বিষক্রিয়ায় পানিতে কমছে অক্সিজেন ও অ্যামোনিয়ামের পরিমাণ। এতে বেশি হারে মারা যাচ্ছে ছোট জাতের মাছ, পোনা ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। এই দূষণ কমাতে কর্তৃপক্ষকে সময় উপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পণ্ডকারখানা স্থাপনের সময় বা এখন শিল্পের বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে কঠোর হতে হবে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকলে কোনো শিল্প স্থাপনা করার অনুমোদন না দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অধিক কঠোর হতে হবে। নদী, খাল বা জলাশয়ে বর্জ্য ফেলার অসুস্থ প্রবণতা রোধ করতে হবে। শিল্পণ্ডকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এইসব শিল্প কারখানাগুলো দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাই এইসব শিল্পকারখানা পুরোপুরি বন্ধ করা যাবেনা। কারখানায় বর্জ্যগুলো পরিশোধন করে তারপর তা ফেলতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে এইসব কারখানা নিয়মিত মনিটর করতে হবে। শুধু আইন করে বা আইন প্রয়োগ করেই এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না তাই সবাইকেই সচেতন হতে হবে। তাহলেই এ সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে আশা করা যায়।