চীনা ঋণের ফাঁদে ক্রমেই জড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ-এ ধরনের প্রচার-প্রোপাগান্ডা সাম্প্রতিককালে ঘন ঘন পরিবেশিত হচ্ছে। চীনা ঋণ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, কেনিয়া, সুদান, জিম্বাবুয়ে, ইথিওপিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রোসহ অনেক দেশের অর্থনীতিকে বিপন্ন করে তুলেছে। বলা হচ্ছে, চীন তার বিশ্ব আধিপত্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোয় প্রধানত মহাসড়ক, রেলপথ, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট, খনিজ আহরণ প্রকল্প ইত্যাদি ভৌত অবকাঠামোয় সহজ শর্তে যে বিপুল ঋণ প্রদান করছে, তাতে বেশির ভাগ দেশ প্রলুব্ধ হয়ে এমনসব প্রকল্পে এ ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করছে, যেগুলোর ‘ইকোনমিক ফিজিবিলিটি’ নড়বড়ে হওয়ায় প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পর ওইসব প্রকল্পের আয় থেকে সুদাসলে চীনা ঋণ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ফলে এসব দেশ একের পর এক চীনা ঋণের ফাঁদে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকা পড়ে ওই প্রকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদি কর্তৃত্ব চীনকে অর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে অথবা চীনকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব-বিরোধী নানা সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে। চীনের নেতৃত্বে রয়েছে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)। এটি চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড (ওবিওআর) কর্মসূচির অংশ। করাচি স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চীনের সংযুক্তি পাকিস্তানের শেয়ার বাজারকে ধ্বংস করেছে। শ্রীলঙ্কা বর্তমানে একটি গুরুতর বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের সাক্ষী, যা বেশ কয়েকটি প্রকল্পে চীনের প্রতি আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূরণে অক্ষমতার কারণে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, কারণ শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড (আইএসবিএক্স) ঋণের পরিপক্কতার তারিখগুলো পূরণ (ঋণের কিস্তি) করতে ব্যর্থ হয়েছে, এই প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ ৮০০ কোটি ডলার। চীনা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলঙ্কাকে তাদের হাম্বানটোটা বন্দর চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হয়েছিল। ১৯৭১ সালের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। চীন বরাবরই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষ শহীদকে চীনা বুলেটে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সুতরাং এইভাবে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া আদর্শগতভাবে ১৯৭১ সালের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাইকা বাংলাদেশকে ০.৭৫% সুদের হারে ঋণ দেয়। অথচ চীনা ঋণের সুদের হার ২.৪৫ শতাংশ। একই সঙ্গে চীন থেকে পরামর্শক নিয়োগ এবং চীনা সরঞ্জাম কেনার মতো শর্তাবলীও রয়েছে। কিছু চীনা প্রকল্প এবং পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ প্রজেক্ট (পিপিপি) নিয়ে অতিমূল্যায়নের অভিযোগে স্লেটিং মন্তব্য করা হয়েছে- যে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা উচিত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। এ কারণে সারা বিশ্বে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির সময় বাংলাদেশকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।