আমাদের দেশের অনেক নদণ্ডনদী ভাঙনপ্রবণ। নদীভাঙনের কবলে পড়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। নদীভাঙন দেশের অর্থনৈতিক এবং প্রাকৃতিক সম্পদ উভয়কেই ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সত্তর ও আশির দশক থেকে এ দেশে নদীভাঙনের প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে আট হাজার সাতশ হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়। যার বেশিরভাগ কৃষিজমি। ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধেক লোকেরই টাকার অভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয় না। তারা হয় গৃহহীন, ছিন্নমূল। এরা সাধারণত বাঁধ, রাস্তা, পরিত্যক্ত রেলসড়ক, খাসচর, খাসজমিতে অবস্থান নেয়। বর্ষাকালে নদীর প্রবাহের বিস্তৃতি অনেক বেশি থাকে। বর্ষা শেষে স্রােত ও পরিধি অনেক কমে যায়। এতে দুকূলে ভাঙন হয়। অনেক স্থানে নদীর দুকূলে স্থাপনা থাকে। এতে নদীর গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে নদীপাড়ে শক্তভাবে পাড় দেওয়া হয় না। নদীপথের শেষদিকে স্রােতের বেগ কম থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে নদীর দুকূল স্রােতের জলে নরম হয়ে যায়। পরে সেখানে ভাঙন সৃষ্টি হয়।
দেশের উন্নয়নের দৃষ্টিতে নদীভাঙন একটি বড় ব্যাপার এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ ও মানবজীবন উন্নয়নের সহিত সামঞ্জস্যহীন হতে পারে। তাই, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন যাতে নদীভাঙন রোধ করা যায় এবং দেশে নদীভাঙন কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্য যা সরকার এবং নাগরিকদের সহযোগিতায় সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে। যদিও সরকারের তরফে ভাঙন রোধে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সময় মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তার খেসারত দিতে হয় নদী পাড়ের মানুষগুলোকে। নদীভাঙন রোধসহ নদী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিরুদ্ধে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ দুর্নীতি দমন করতে না পারলে নদীভাঙন রোধে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। ফলে পরিবেশের অবনতি হতে পারে। তাই নদীভাঙন কমাতে পারে এবং পরিবেশের সুরক্ষা ও অবনতি কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
নদীভাঙন একটি বিপদজনক সমস্যা যা দুর্গতি এবং পরিবেশ ধ্বংসের সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এটি একটি পরিবেশস্বার উপায় যা নদী প্রবাহের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে এবং নদীভাঙন কমাতে সাহায্য করবে এছাড়াও রয়েছে সেচ ও বন্য প্রতিরোধ প্রকল্প সম্পন্ন করা। এটি নদীপার তীব্রতা কমিয়ে নেওয়া এবং বন্য প্রতিরোধে সাহায্য করবে। নদীবন্দর ও নদীর অধিকার বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে এবং সেখানে কোনো পরিবেশ বিনিয়োগ করা যাবে না। নদীর পাথর ও মাটি নিয়ে খেতি করা বন্ধ করতে হবে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ভাঙনরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি ঘরবাড়ি, জমি হারা মানুষের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।