১২ মে প্রতি বছর বিশ্বে সম্মানের সাথে পালিত হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। সমাজের প্রতি অবদান ও মানুষের সেবায় যেভাবে তারা কাজ করেন, তা সবার সামনে তুলে ধরতে দিনটি পালন করে বিশ্ব। মানবসেবায় অনন্য দায়িত্ব পালনকারী নার্সদের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হয় এবং প্রতিবারের মতো এবারো পালিত হলো আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। আন্তর্জাতিক নার্স দিবস ২০২৩ এর প্রতিপাদ্য ছিলো, আমাদের নার্স; আমাদের ভবিষ্যৎ। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস (আইসিএন) আন্তর্জাতিক নার্স দিবস ২০২৩ এর প্রতিপাদ্যটি ঘোষণা করেছেন। আধুনিক নার্সিংয়ের জননী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন ১২ মে। তাই এই দিনটি পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে। ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির অভিজাত পরিবারে জন্ম আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের (ঋষড়ৎবহপব ঘরমযঃরহমধষব)। ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটি 'ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে' (রহঃবৎহধঃরড়হধষ হঁৎংবং ফধু) হিসাবে পালিত হয়ে আসছে গোটা বিশ্বে।
বিশ্বব্যাপী সেবিকা পেশার বিকাশের মাধ্যমে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল আর্ত-মানবতার কষ্টের আঁধার কেটে এনেছেন আশাবাদী আলোর জোয়ার। তাই এখনো তিনি সেবিকাদের মডেল হয়ে আছেন। তার দেখানো পথেই হেঁটে চলেছেন নিবেদিতপ্রাণ শত-সহস্র সেবিকা। বর্তমানে গোটা বিশ্বে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অন্যান্য পেশার থেকে নার্সের সংখ্যা বেশি। আধুনিকতম স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগীদের চাহিদা সম্পর্কে ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজন ইত্যাদি পড়ে তার মধ্যে। প্রতিটি দেশ নিজের নিজের মত করে পালন করে এই দিনটি। আগে ঢাকায় স্বল্প পরিসরে দিবসটি পালিত হলেও বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে নার্সিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও নার্সের অধিকার সুরক্ষিত করা এবং ‘দেশে নার্সদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই জরুরি। কেননা নার্সরা স্বাস্থ্যখাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। সেজন্য সরকারকে নার্সিং শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কর্মক্ষেত্রে তাদের মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা কারিকুলাম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে নার্সিং কলেজ পরিচালিত নার্সিং কোর্স পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয় আর ডিপ্লোমা কোর্স নিয়ন্ত্রণ করে নার্সিং কাউন্সিল নার্সিং সেবার অব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসাব্যবস্থার অন্তর্নিহিত দর্শন আর স্বাস্থ্যসেবার কাক্সিক্ষত সূচক ও মানদণ্ড প্রচণ্ডভাবে নিম্নগামী হয়ে গেছে। চিকিৎসার মূলমন্ত্র ও প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বকথার সঙ্গে দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতের বিদ্যমান ক্ষয়িষ্ণু অবস্থাচিত্র তৈরি করেছে বিস্তার ফারাক জনস্বার্থে নার্সিং পেশার উন্নয়নে সম্মিলিত আরও উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। তাই ঔপনিবেশিক আমলে প্রতিষ্ঠিত নার্সিং কাউন্সিল থেকে নার্সিং শিক্ষা কার্যক্রম পৃথক করে প্রস্তাবিত বিভাগীয় ডিপ্লোমা শিক্ষা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত করা জরুরি, যে বোর্ড স্বল্প সময়ের মধ্যে একদল সুদক্ষ নার্স বাহিনী উপহার দেবে। সুস্থ-সবল জাঁতি গঠন-প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।