সারা দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর বেতনসহ নানা ফিতে বিস্তর ফারাক দেখা যায়। সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন বিদ্যালয় বিশেষ করে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো নিজেদের মতো করে বেতন-ফি ঠিক করে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো পড়াশোনা না হওয়ায় কোচিং-প্রাইভেটেও খরচ করতে হয় অভিভাবকদের। বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ৭১ শতাংশই পরিবারকে বহন করতে হয়। এর মধ্যে কোচিং-প্রাইভেটের খরচও দিন দিন বাড়ছে। এনজিও বিদ্যালয়ে ফি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তিন গুণ আর বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে ৯ গুণ বেশি। তাই বেতন ও ফির বিষয়ে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা দরকার। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো মাধ্যমিক পর্যন্ত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও এমপিওভুক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা গেলে এই বৈষম্য দূর করা যাবে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য মতে, দেশে মাধ্যমিক স্তরে পড়ানো হয় ২০ হাজার ৯৬০ বিদ্যালয়ে। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখের বেশি। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক স্তরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ২ কোটি ১ লাখের বেশি। একেক ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেক ধরনের বেতন ও ফি আদায় করে। তাই এসব বৈষম্য দূর করা উচিত। যেকোনোভাবেই হোক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য আনা দরকার। যেহেতু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চরম বিশৃঙ্খল, বৈষম্যমূলক, বাণিজ্যিক এবং অমানবিক। এ বৈষম্যমূলক কারণে রাষ্ট্র সবার জন্য সমান সুযোগ দিচ্ছে না। যার অর্থ নেই তারা পড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যার আরেকটু সামর্থ্য আছে তারা পড়ে কিন্ডারগার্টেনে, আরও ধনীরা পড়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। কে কেমন শিক্ষা পাবে সেটা এখানে অর্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় বাণিজ্যিক চিন্তা ভাবনা নিয়ে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। এমন অনেক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আছে যেগুলোর বেতন মাসে লক্ষ টাকা। এর বাইরে আছে প্রাইভেট টিউশন। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পড়ুক না কেন - কোচিং এবং প্রাইভেট টিউশন সবারই করা লাগে। ভাল স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করার জন্য পর্যন্ত কোচিং করা লাগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং তো আছেই। কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলো সহশিক্ষার নামে শিশুদের উপর বাড়তি বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এর সাথে আছে ক্লাস টেস্ট, মাসিক পরীক্ষা, ত্রৈমাসিক পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা। স্কুলের পর কোচিং, নেই খেলার অবসর। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে নেই খেলার মাঠ। লেখাপড়া বাচ্চাদের কাছে একটা আতংকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষিত করার বদলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো হয়ে দাঁড়িয়েছে তোতাপাখির মত মুখস্থ বুলি শেখানোর প্রতিষ্ঠান।